বাংলা ভাষায় ‘তৎসম’ ও ‘তদ্ভব’ শব্দের উদাহরণ কী?
বাংলা ভাষায় ‘তৎসম’ ও ‘তদ্ভব’ শব্দের উদাহরণ কী?
বাংলা ভাষায় ‘তৎসম’ ও ‘তদ্ভব’ শব্দ দুটি মূলত শব্দের উৎপত্তি অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগের অংশ। এই শব্দগুলি প্রাচীন ভারতীয় ভাষা সংস্কৃত থেকে এসেছে। তৎসম এবং তদ্ভব শব্দের পার্থক্য তাদের আকার ও অর্থের পরিবর্তনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
১. তৎসম শব্দ (Tatsama Words)
তৎসম শব্দগুলো এমন শব্দ, যা সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলায় প্রায় অপরিবর্তিত আকারে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, এই শব্দগুলি সংস্কৃত ভাষায় যেমন ছিল, বাংলা ভাষায়ও তা প্রায় একইভাবে রয়ে গেছে।
তৎসম শব্দের উদাহরণ:
অগ্নি (সংস্কৃত থেকে প্রায় অপরিবর্তিত)
নদী (নদী → সংস্কৃতেও একইভাবে ব্যবহৃত)
সূর্য (সংস্কৃত থেকে অপরিবর্তিত)
বৃক্ষ (সংস্কৃতেও একই)
কুমার (কুমার → সংস্কৃত শব্দ)
গুরু (গুরু → সংস্কৃতেও একই)
মাতা (মাতা → সংস্কৃত থেকে অপরিবর্তিত)
পিতৃ (সংস্কৃতেও একই)
২. তদ্ভব শব্দ (Tadbhava Words)
তদ্ভব শব্দগুলো মূলত সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে, তবে বাংলায় ব্যবহৃত হতে গিয়ে সময়ের সাথে সাথে আকার ও উচ্চারণের পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থাৎ, তদ্ভব শব্দগুলো সংস্কৃতের প্রাচীন রূপ থেকে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় নতুন রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তদ্ভব শব্দের উদাহরণ:
অগি → আগুন (সংস্কৃত ‘অগ্নি’ থেকে পরিবর্তিত)
নদী → নদি → নদি → নদি (সংস্কৃত ‘নদী’ থেকে পরিবর্তিত)
সুর্য → সূর্য → সার (সংস্কৃত ‘সূর্য’ থেকে পরিবর্তিত)
বৃক্ষ → গাছ (সংস্কৃত ‘বৃক্ষ’ থেকে পরিবর্তিত)
কুমার → কুমার → কুমোর (সংস্কৃত ‘কুমার’ থেকে পরিবর্তিত)
গুরু → গুরু → গরু (সংস্কৃত ‘গুরু’ থেকে পরিবর্তিত)
মাতা → মা (সংস্কৃত ‘মাতা’ থেকে পরিবর্তিত)
পিতৃ → পিতা → বাবা (সংস্কৃত ‘পিতৃ’ থেকে পরিবর্তিত)
তৎসম এবং তদ্ভব শব্দের তুলনা:
অগ্নি (তৎসম) → আগুন (তদ্ভব)
নদী (তৎসম) → নদী (তদ্ভব)
বৃক্ষ (তৎসম) → গাছ (তদ্ভব)
মাতা (তৎসম) → মা (তদ্ভব)
পিতৃ (তৎসম) → বাবা (তদ্ভব)
উপসংহার:
বাংলা ভাষায় তৎসম ও তদ্ভব শব্দের পার্থক্য মূলত তাদের আকার, উচ্চারণ এবং ব্যবহারিক রূপের মধ্যে নিহিত। তৎসম শব্দগুলো সংস্কৃত থেকে প্রায় অপরিবর্তিত আকারে বাংলায় এসেছে, আর তদ্ভব শব্দগুলো সময়ের সাথে সাথে বাংলায় পরিবর্তিত হয়েছে এবং স্থানীয় রূপ নিয়েছে। এই দুই ধরণের শব্দ বাংলার শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় করেছে, যা ভাষার ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে প্রতিফলিত করে।