বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নতুন ধারার প্রবণতা কী?

19 বার দেখাবিনোদনচলচ্চিত্র বাংলাদেশ
0

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নতুন ধারার প্রবণতা কী?

ফয়সাল কবীর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 6 দিন পূর্বে
0

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন ধারার প্রবণতা বেশ দৃশ্যমান, যা দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে এক নতুন গতির সূচনা করেছে। এ প্রবণতা মূলত চলচ্চিত্রের কাহিনি, নির্মাণশৈলী, প্রযুক্তি, এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের নির্মাতারা সমাজের জটিল সমস্যা, সামাজিক ও ব্যক্তিগত গল্প, এবং নান্দনিক চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।

নিচে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নতুন ধারার প্রবণতার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

১. স্বাধীন ও বিকল্প চলচ্চিত্রের উত্থান:
বাংলাদেশের নতুন ধারার চলচ্চিত্রে স্বাধীন ও বিকল্প চলচ্চিত্র বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে। এসব চলচ্চিত্র সাধারণত মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের বাইরে গিয়ে সমাজের গভীর ও জটিল বিষয়গুলো তুলে ধরে। এই ধরনের চলচ্চিত্রগুলোতে বৈচিত্র্যময় কাহিনি এবং চরিত্রের গভীরতা বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।

উদাহরণ হিসেবে “আলফা”, “শনিবার বিকেল”, “আয়নাবাজি”, এবং “মেড ইন বাংলাদেশ” এর মতো সিনেমাগুলোকে বলা যেতে পারে, যেগুলো বাংলাদেশি সিনেমার নতুন ধারার প্রতিনিধিত্ব করে এবং সমাজের নানা স্তরের জটিলতা ও সমস্যা নিয়ে কাজ করে।
২. আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালে অংশগ্রহণ ও স্বীকৃতি:
নতুন প্রজন্মের নির্মাতারা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করছেন এবং অনেক সিনেমা আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি লাভ করছে। এর ফলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করছে এবং আন্তর্জাতিক মানের গল্প বলার জন্য প্রযোজক ও পরিচালকরা আরও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।

উদাহরণস্বরূপ, রুবাইয়াত হোসেনের “মেড ইন বাংলাদেশ”, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর “শনিবার বিকেল”, এবং আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের “রেহানা মরিয়ম নূর” আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং বাংলাদেশি সিনেমার নতুন ধারা তুলে ধরেছে।
৩. ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার:
ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আগে যেখানে চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় হতো, এখন ডিজিটাল ক্যামেরা, এডিটিং সফটওয়্যার, এবং কম খরচে প্রযোজনার সুবিধার কারণে চলচ্চিত্র নির্মাণ সহজ হয়েছে। এর ফলে তরুণ নির্মাতারা কম বাজেটে, কিন্তু নান্দনিক সিনেমা তৈরি করতে পারছেন।

এই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে এবং অনেক নতুন নির্মাতা নিজেদের সিনেমার মাধ্যমে দর্শকের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছেন।
৪. সামাজিক ও সমকালীন বিষয়বস্তু:
নতুন ধারার চলচ্চিত্রগুলোতে সামাজিক ও সমকালীন বিষয়গুলো বিশেষভাবে স্থান পাচ্ছে। যেখানে পুরোনো ধারার সিনেমাগুলো বেশি মনোরঞ্জনের জন্য নির্মিত হতো, নতুন ধারার সিনেমাগুলোতে সমাজের বাস্তব সমস্যা, বৈষম্য, নারী অধিকার, অভিবাসন, গার্হস্থ্য সহিংসতা, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে, “নোনাজলের কাব্য” এবং “মেড ইন বাংলাদেশ” সিনেমাগুলো নারীর ক্ষমতায়ন এবং শ্রমজীবী নারীদের সংগ্রামকে তুলে ধরেছে, যা একসময় মূলধারার চলচ্চিত্রে প্রায় অনুপস্থিত ছিল।
৫. নতুন ধারার অভিনেতা ও চরিত্রায়ণ:
বাংলাদেশের নতুন ধারার চলচ্চিত্রগুলোতে অনেক নতুন অভিনেতা এবং অভিনেত্রী আসছেন, যারা ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করছেন। এসব চরিত্র সাধারণত সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবন এবং বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলে। এই ধরনের অভিনয়ের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের অভিনেতারা নিজেদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন এবং সমালোচকদের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন।

উদাহরণ হিসেবে, “আয়নাবাজি” সিনেমার চঞ্চল চৌধুরীর চরিত্রায়ণ এবং “রেহানা মরিয়ম নূর” সিনেমায় আজমেরী হক বাঁধনের শক্তিশালী অভিনয়কে উল্লেখ করা যেতে পারে, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের নতুন ধারার প্রতিনিধিত্ব করছে।
৬. নতুন প্ল্যাটফর্ম ও ওটিটি:
নতুন ধারার চলচ্চিত্রগুলোর উত্থানের একটি বড় কারণ হলো ওটিটি প্ল্যাটফর্মের (ওভার-দ্য-টপ) প্রসার। বাংলাদেশের দর্শকরা এখন নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, এবং স্থানীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে সহজেই নতুন সিনেমা দেখতে পারছেন। এর ফলে চলচ্চিত্র নির্মাতারা প্রথাগত সিনেমা হলের বাইরে গিয়ে তাদের সিনেমা দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন।

এর উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের চরকি এবং বায়স্কোপ এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর সাফল্য বলা যেতে পারে।
৭. নারী নির্মাতাদের অংশগ্রহণ:
বাংলাদেশের নতুন ধারার চলচ্চিত্রে নারী নির্মাতাদের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নারীর জীবন, সংগ্রাম, এবং সমাজে তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে কাজ করছেন। এ ধরনের সিনেমাগুলোতে নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে গল্প বলা হচ্ছে এবং এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে, রুবাইয়াত হোসেনের সিনেমাগুলো নারীর অবস্থান এবং সমাজে তাদের সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরছে।
৮. কম বাজেটে সিনেমা নির্মাণ ও শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি:
নতুন ধারার সিনেমাগুলোতে অনেক সময় কম বাজেটে নির্মাণ করা হয়, কিন্তু গল্প বলার ক্ষেত্রে শৈল্পিক মান এবং গুণগত মান বজায় রাখা হয়। এসব সিনেমা মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমার তুলনায় ছোট বাজেটে তৈরি হয়, কিন্তু তা দর্শকের মন জয় করতে সক্ষম হয়।

সারসংক্ষেপ:
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন ধারার প্রবণতা মূলত স্বাধীন সিনেমা, সামাজিক বাস্তবতা, এবং আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণশৈলীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। তরুণ নির্মাতাদের সৃজনশীলতা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার, নারী নির্মাতাদের অংশগ্রহণ, এবং আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে।

ফয়সাল কবীর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 6 দিন পূর্বে
আপনি 1 উত্তরের মধ্যে 1টি দেখছেন, সব উত্তর দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বিভাগসমূহ