ব্ল্যাক হোল কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?

18 বার দেখাবিজ্ঞানব্ল্যাক হোল
0

ব্ল্যাক হোল কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 5 দিন পূর্বে
0

ব্ল্যাক হোল হল একটি মহাকাশিক অবকাঠামো, যেখানে আকর্ষণ শক্তি এত প্রবল হয় যে এর আশেপাশে কোনো কিছুর জন্য, এমনকি আলোও, বেরোনো সম্ভব নয়। এটি সাধারণত একটি মৃত নক্ষত্রের কারণে তৈরি হয় যখন তার কেন্দ্রস্থলে প্রচুর পরিমাণে ভর কেন্দ্রীভূত হয়ে যায়। ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রকে বলা হয় “সিঙ্ক্রোন” এবং এর চারপাশের অঞ্চলকে বলা হয় “ইভেন্ট হরিজন”।

ব্ল্যাক হোলের প্রকারভেদ
ব্ল্যাক হোল সাধারণত তিনটি প্রধান প্রকারে ভাগ করা হয়:

স্টেলার ব্ল্যাক হোল: এটি সাধারণত বৃহৎ নক্ষত্রের মৃত্যুর পর সৃষ্টি হয়। যখন একটি নক্ষত্র তার জীবন শেষ করে এবং সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে তার বাইরের স্তরকে নিক্ষেপ করে, তখন এর কেন্দ্রীয় অংশ সংকুচিত হয়ে ব্ল্যাক হোল তৈরি করে।
সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল: এটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে পাওয়া যায় এবং এর ভর সূর্যের ভরের কয়েক মিলিয়ন থেকে কয়েক বিলিয়ন গুণ হতে পারে। আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রেও একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল আছে, যা “সাগিটারিয়াস A*” নামে পরিচিত।
মধ্যবর্তী ব্ল্যাক হোল: এই প্রকারের ব্ল্যাক হোলগুলি স্টেলার এবং সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের মধ্যে থাকে এবং এর ভর সূর্যের ভরের কয়েকশত থেকে কয়েক হাজার গুণ পর্যন্ত হতে পারে।
ব্ল্যাক হোলের কার্যপ্রণালী
ব্ল্যাক হোলের কাজ করার পদ্ধতি কিছুটা জটিল, তবে মূল ধারণা এখানে:

মা (Singularity): ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রস্থলে “মা” বা সিঙ্ক্রোন অবস্থিত থাকে, যেখানে ভর এত অধিক কেন্দ্রীভূত হয় যে গুনগত তাপ ও ঘনত্ব অসীম হয়ে যায়। এখানে মূলত পদার্থ এবং সময়ের চিরস্থায়ীত্ব ভেঙে যায়।
ইভেন্ট হরিজন: এটি ব্ল্যাক হোলের চারপাশের একটি সীমানা যা ইঙ্গিত দেয় যে এখানে পৌঁছালে কিছুই আর বের হতে পারবে না। এর বাইরে অবস্থানরত একটি পর্যবেক্ষক ব্ল্যাক হোলের দিকে পড়তে থাকা পদার্থকে দেখবে, কিন্তু ব্ল্যাক হোলের ভিতরে কিছু দেখার সম্ভাবনা নেই।
আকর্ষণশক্তি: ব্ল্যাক হোলের আকর্ষণশক্তি খুব শক্তিশালী। এটি মহাকাশের অন্যান্য পদার্থকে আকর্ষণ করতে পারে এবং বিভিন্ন নক্ষত্র, গ্যাস, এবং ধূলিকণাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে।
ডিস্ক অব এক্রেশন (Accretion Disk): যখন ব্ল্যাক হোলের চারপাশে পদার্থ পড়তে থাকে, তখন এটি একটি ঘূর্ণনশীল ডিস্ক তৈরি করে। এই ডিস্কের মধ্যে পদার্থ তাপিত হয়ে এক্স-রে এবং অন্যান্য রশ্মি নির্গত করে।
ব্ল্যাক হোলের পর্যবেক্ষণ
ব্ল্যাক হোল সরাসরি দেখা সম্ভব নয়, কিন্তু তাদের উপস্থিতি বোঝার জন্য বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করা হয়:

গ্র্যাভিটেশনাল প্রভাব: ব্ল্যাক হোলের আকর্ষণশক্তি আশেপাশের তারাদের গতি এবং কক্ষপথ পরিবর্তন করে। এই তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা পায়।
এক্স-রে নির্গমন: ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি থাকা পদার্থ যখন তাপিত হয়, তখন এটি এক্স-রে রশ্মি তৈরি করে, যা টেলিস্কোপ দ্বারা ধরা পড়ে।
উপসংহার
ব্ল্যাক হোল একটি রহস্যময় মহাকাশিক অবকাঠামো, যা নক্ষত্রের মৃত্যু এবং মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। ব্ল্যাক হোলের কাজকর্ম এবং তাদের প্রভাবগুলি আধুনিক মহাবিজ্ঞান গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যা আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করে।

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 5 দিন পূর্বে
আপনি 1 উত্তরের মধ্যে 1টি দেখছেন, সব উত্তর দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বিভাগসমূহ