সংস্কৃত কী?

মিমাংসিত1.86K বার দেখাভাষাভারতবর্ষ ভাষা
5

সংস্কৃত কী?

নতুন উত্তরের জন্য প্রশ্ন বন্ধ রয়েছে।
আরিফুর রহমান প্রকাশের স্থিতি পরিবর্তিত করেছেন জানুয়ারি 31, 2023
4

সংস্কৃত

সংস্কৃত (সংস্কৃত উচ্চারণ: [ˈsɐ̃skr̩t̪ɐm] संस्कृतम् সংস্কৃতম্‌, সঠিক নাম: संस्कृता वाक्, সংস্কৃতা বাক্, পরবর্তীকালে প্রচলিত অপর নাম: संस्कृतभाषा সংস্কৃতভাষা, “পরিমার্জিত ভাষা”) হল একটি ঐতিহাসিক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা এবং হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের পবিত্র দেবভাষা। এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান দুই বিভাগের একটি “শতম” ভুক্ত ভাষা। বর্তমানে সংস্কৃত ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার অন্যতম এবং উত্তরাখণ্ড রাজ্যের অন্যতম সরকারি ভাষা।

ধ্রুপদী-সংস্কৃত এই ভাষার প্রামাণ্য ভাষাপ্রকার। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রচিত পাণিনির ব্যাকরণে এই প্রামাণ্যরূপটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপে লাতিন বা প্রাচীন গ্রিক ভাষার যে স্থান, বৃহত্তর ভারতের সংস্কৃতিতে সংস্কৃত ভাষার সেই স্থান।

ভারতীয় উপমহাদেশ, বিশেষত ভারত ও নেপালের অধিকাংশ আধুনিক ভাষাই এই ভাষার দ্বারা প্রভাবিত।

সংস্কৃতের প্রাক-ধ্রুপদি রূপটি বৈদিক সংস্কৃত নামে পরিচিত। এই ভাষা ঋগ্বেদের ভাষা এবং সংস্কৃতের প্রাচীনতম রূপ। এর সর্বাপেক্ষা প্রাচীন নিদর্শনটি প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে রচিত। এই কারণে ঋগ্বৈদিক সংস্কৃত হল প্রাচীনতম ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগুলির অন্যতম এবং ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের (ইংরেজি ও অধিকাংশ ইউরোপীয় ভাষা যে পরিবারের সদস্য) আদিতম সদস্য ভাষাগুলির অন্যতম। বৈদিক সংস্কৃতের সঙ্গে প্রাচীন এবং ধ্রুপদী লাতিন,গথিক, প্রাচীন নর্স, প্রাচীন আবেস্তী ও নবতর আবেস্তীর সম্পর্ক অনেকটা দূরের। এর আরও নিকট-আত্মীয় হলো নুরিস্তানি ভাষাগুলো।

সংস্কৃত সাহিত্যের ভাণ্ডার কাব্য ও নাটকের ঐতিহ্যশালী ধারাদুটি ছাড়াও বৈজ্ঞানিক, কারিগরি, দার্শনিক ও হিন্দু শাস্ত্রীয় রচনায় সমৃদ্ধ। হিন্দুদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সংস্কৃত হল আনুষ্ঠানিক ভাষা। এই ধর্মে স্তোত্র ও মন্ত্র সবই সংস্কৃতে লিখিত। কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে আজও কথ্য সংস্কৃতের ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে এবং সংস্কৃত ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করার নানা প্রচেষ্টাও করা হয়ে থাকে।

ব্যুৎপত্তি

সংস্কৃত ক্রিয়া বিশেষণ সংস্কৃত- কথাটির আক্ষরিক অর্থ “সংযুক্ত করা”, “উন্নত ও সম্পূর্ণ আকারপ্রাপ্ত”, “পরিমার্জিত” বা “সুপ্রসারিত”। শব্দটি সংস্কার ধাতু থেকে উৎসারিত; যার অর্থ “সংযুক্ত করা, রচনা করা, ব্যবস্থাপনা করা ও প্রস্তুত করা”। সং শব্দের অর্থ “সমরূপ” এবং “(স্)কার” শব্দের অর্থ “প্রস্তুত করা”। এই ভাষাটিকে সংস্কৃত বা পরিমার্জিত ভাষা মনে করা হয়। এই কারণে এই ভাষা একটি “পবিত্র” ও “অভিজাত” ভাষা। প্রাচীন ভারতে ধর্মীয় ও শিক্ষাদান-সংক্রান্ত উদ্দেশ্যে লোকপ্রচলিত প্রাকৃত (“প্রাকৃতিক, শিল্পগুণবর্জিত, স্বাভাবিক ও সাধারণ”) ভাষার পরিবর্তে এই ভাষা ব্যবহৃত হত। এই ভাষাকে “দেবভাষা” বলা হত; কারণ প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই ভাষা ছিল “দেবগণ ও উপদেবতাগণের ভাষা”।

ইতিহাস

সংস্কৃত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের ইন্দো-ইরানীয় উপপরিবারের সদস্য। এই ভাষার নিকটতম প্রাচীন আত্মীয় হল ইরানীয় আদি পারসিক ও আবেস্তান ভাষাদুটি। বৃহত্তর ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারে সংস্কৃত ভাষার ধ্বনিপরিবর্তন বৈশিষ্ট্যগুলি সাতেম ভাষাসমূহ (বিশেষত স্লাভিক ও বাল্টিক ভাষা) এবং গ্রিক ভাষার অনুরূপ।

সংস্কৃত ও অন্যান্য ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করতে গিয়ে গবেষকগণ একটি অনুপ্রবেশ তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, বর্তমানে যে ভাষাটি সংস্কৃত ভাষায় পরিণত হয়েছে, তার আদি ভাষাভাষীগণ খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথম ভাগে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পথে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে। এই তত্ত্বের প্রমাণস্বরূপ বাল্টিক ও স্লাভিক ভাষার সঙ্গে ইন্দো-ইরানীয় ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, অ-ইন্দো-ইউরোপীয় ফিনো-আগরিক ভাষাসমূহের সঙ্গে শব্দভাণ্ডার আদানপ্রদান, এবং উদ্ভিদ ও জীবজগতের নামসংক্রান্ত ইন্দো-ইউরোপীয় প্রামাণ্য শব্দগুলিকে তুলে ধরা হয়।

সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রাচীনতম প্রামাণ্য রচনা হল হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদ। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মধ্য থেকে শেষ ভাগের মধ্যবর্তী সময়ে এই গ্রন্থ রচিত হয়। এই সময়কার কোনো লিখিত নথি পাওয়া যায় না। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গ্রন্থের মৌখিক প্রচলনটি বিশ্বাসযোগ্য। কারণ, এই জাতীয় গ্রন্থগুলির সঠিক উচ্চারণকে ধর্মীয় কারণেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হত।

ঋগ্বেদ থেকে পাণিনি (খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী) পর্যন্ত সংস্কৃত ভাষার বিকাশ লক্ষিত হয় সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, ব্রাহ্মণ এসব গ্রন্থগুলিতে। এই সময় থেকে এই ভাষার মর্যাদা, ধর্মীয় ক্ষেত্রে এর ব্যবহার, এবং এর সঠিক উচ্চারণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলি এই ভাষার বিবর্তনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী প্রাচীনতম সংস্কৃত ব্যাকরণ, যা আজও বর্তমান রয়েছে। এটি মূলত একটি প্রামাণ্য ব্যাকরণ। এটি বর্ণনামূলক নয়, নির্দেশমূলক প্রামাণ্য গ্রন্থ। যদিও পাণিনির সময় বেদের কয়েকটি অচলিত হয়ে পড়া কয়েকটি বাক্যবন্ধের বর্ণনাও এখানে রয়েছে।

“সংস্কৃত” শব্দটির দ্বারা অন্যান্য ভাষা থেকে পৃথক একটি ভাষাকে বোঝাত না, বরং বোঝাত একটি পরিমার্জিত কথনরীতিকে। প্রাচীন ভারতে সংস্কৃত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষিত উচ্চসমাজে স্থান পাওয়া যেত। সাধারণত উচ্চবর্ণের মধ্যেই পাণিনির ব্যাকরণ তথা সংস্কৃত ভাষার চর্চা প্রচলিত ছিল। প্রাচীন ভারতে সংস্কৃত ছিল বিদ্যাচর্চার ভাষা। লোকসাধারণে প্রচলিত প্রাকৃত ভাষার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতও সমাজে প্রচলিত ছিল। উল্লেখ্য কথ্য প্রাকৃত ভাষা থেকেই পরবর্তীকালের আধুনিক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলির উৎপত্তি হয়।

আরিফুর রহমান সেরা উত্তর হিসাবে নির্বাচন করেছেন জানুয়ারি 12, 2023
আপনি 2 উত্তরের মধ্যে 1টি দেখছেন, সব উত্তর দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বিভাগসমূহ