গান্ধীজীর ‘দান্ডি অভিযান’ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

12 বার দেখাইতিহাসগান্ধী গান্ধীজী
0

গান্ধীজীর ‘দান্ডি অভিযান’ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে
0

দান্ডি অভিযান (Dandi March), যা ইংরেজিতে Salt March নামে পরিচিত, মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ১৯৩০ সালে পরিচালিত এক উল্লেখযোগ্য অহিংস আন্দোলন। এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে নোনার কর (Salt Tax) নীতির প্রতিবাদে শুরু হয়েছিল। এই অভিযানটি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর গুরুত্ব বহু দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। নিচে দান্ডি অভিযানের গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. অহিংস সৎযুদ্ধের প্রতীক
ক. অহিংস প্রতিবাদ

গান্ধীজী ননভায়েডেন্স মোশন (Non-Cooperation Movement) এর অংশ হিসেবে দান্ডি অভিযান পরিচালনা করেন। এই আন্দোলনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের প্রতি অহিংস প্রতিবাদ দেখানো এবং স্বাধীনতার চেতনা জাগানো। গান্ধীজী অহিংসতার মাধ্যমে সংগ্রামের একটি শক্তিশালী এবং নৈতিক পথ প্রদর্শন করেন।

খ. সৎযুদ্ধের শক্তি

দান্ডি অভিযানে গান্ধীজী প্রদর্শন করেন যে অহিংস প্রতিবাদ কেবল নৈতিকভাবে সঠিকই নয়, বরং এটি শাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর ও প্রভাবশালী হতে পারে। এই অভিযান আন্তর্জাতিকভাবে ভারতীয় আন্দোলনের নৈতিক ও মানবিক চেহারা তুলে ধরে।

২. জনসাধারণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি
ক. বৃহৎ জনসমর্থন

দান্ডি অভিযানে হাজার হাজার ভারতীয় জনতা অংশগ্রহণ করেন, যা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একত্রিত এবং সংগঠিত আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে। এই জনসমর্থন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণের একতাবদ্ধতা ও শক্তিশালী ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে।

খ. নারীদের অংশগ্রহণ

দান্ডি অভিযানে নারীদেরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, যা তখনকার সময়ে নারী স্বীকৃতি ও স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। এটি সমাজে নারীর ভূমিকাকে নতুন দিশা দেখায় এবং তাদের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের প্রেরণা যোগায়।

৩. ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক প্রতিবাদ
ক. নোনার করের প্রতিবাদ

ব্রিটিশ শাসন ভারতের নোনার কর আরোপ করে যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলে। গান্ধীজীর এই অভিযানটি নোনার করের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির একটি প্রাথমিক প্রচেষ্টা ছিল।

খ. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা

আগ্রহীভাবে নোনার কর লঙ্ঘন করে ভারতীয় জনগণ ব্রিটিশ শাসনের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করে। এটি ব্রিটিশদের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে এবং তাদের নীতিগুলির পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায়।

৪. আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ
ক. বিশ্বমঞ্চে ভারতের প্রতিবাদ

দান্ডি অভিযানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের সংগ্রাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা হয়। এই অভিযানটি বিশ্বমঞ্চে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের বৈধতা এবং গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করে, যা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহায়তার পথ প্রশস্ত করে।

খ. মিডিয়ার ভূমিকা

দান্ডি অভিযান ব্রিটিশ গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়, যা বিশ্ববাসীর চোখে ভারতের সংগ্রামকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত করে। এটি ভারতের স্বাধীনতার চেতনা বিশ্বব্যাপী বিস্তার করতে সহায়ক হয়।

৫. রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তন
ক. জাতীয় চেতনার বিকাশ

দান্ডি অভিযান ভারতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও একাত্মতা জাগ্রত করে। এটি ভারতীয় জনগণের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যের প্রতি একসাথে সংগ্রামের মনোভাব সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা অর্জনে সহায়ক হয়।

খ. ব্রিটিশ শাসনের নীতিগুলিতে প্রভাব

দান্ডি অভিযান ব্রিটিশ শাসনকে ভারতের জনগণের অসন্তোষ ও প্রতিরোধের সাথে মুখোমুখি করে তোলে। এর ফলে ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন নীতি পরিবর্তন ও স্বায়ত্তশাসন বৃদ্ধি করার দিকে মনোযোগ দেয়।

৬. আইনি ও রাজনৈতিক পরিবর্তন
ক. নোনার কর বাতিলের প্রভাব

দান্ডি অভিযানের প্রভাবে ব্রিটিশ সরকার কিছু সীমিত নোনার কর নীতিগুলিকে বাতিল করে, যা অভিযানের সফলতার এক প্রতিফলন। এটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

খ. স্বাধীনতা আন্দোলনের পথপ্রদর্শক

দান্ডি অভিযান পরবর্তীতে অন্যান্য আন্দোলনের জন্য একটি পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। এটি অহিংস প্রতিবাদের শক্তি এবং কার্যকারিতা প্রদর্শন করে, যা পরবর্তীতে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

৭. সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব
ক. পরস্পর বিশ্বাস ও সহযোগিতা

দান্ডি অভিযানে বিভিন্ন সমাজের মানুষ একত্রিত হয়ে সংগ্রাম করেন, যা সামাজিক বৈষম্য ও বিভাজন দূর করার দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণকে একত্রিত করে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংহতির প্রতীক হিসেবে কাজ করে।

খ. নারীর ক্ষমতায়ন

দান্ডি অভিযানে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ তাদের ক্ষমতায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ ছিল। এটি নারীদের সমাজে একটি নতুন স্থান দেয় এবং তাদের স্বাবলম্বী ও সংগ্রামী চেতনা জাগ্রত করে।

উপসংহার
দান্ডি অভিযান ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা অহিংসতার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ প্রদর্শন করে। এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, বরং একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত হয়। গান্ধীজীর নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানটি ভারতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয় চেতনা, একতা, এবং স্বাধীনতার প্রতি অটল সংকল্পকে দৃঢ় করে, যা পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করে।

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে

বিভাগসমূহ