ব্যবিলনীয় সভ্যতা কোথায় গড়ে উঠেছিল?

824 বার দেখাইতিহাসইতিহাস
0

ব্যবিলনীয় সভ্যতা কোথায় গড়ে উঠেছিল?

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024
0

ব্যবিলনীয় সভ্যতা (Babylonian Civilization) প্রাচীন মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল, যা বর্তমান ইরাকের দক্ষিণাংশ এবং সিরিয়ার উত্তরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। মেসোপটেমিয়া, যার অর্থ “দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি,” টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর মাঝে অবস্থিত একটি উর্বর উপত্যকা।

ভৌগোলিক অবস্থান:

নদীসমূহ: ব্যবিলনীয় সভ্যতা প্রধানত টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর তীরে বিকশিত হয়েছিল। এই নদীগুলোই মেসোপটেমিয়ার জীবনধারা, কৃষি, এবং বাণিজ্যকে সমর্থন করত।
আধুনিক স্থান: বর্তমানের ইরাকের বাগদাদ শহরের কাছাকাছি এই সভ্যতা বিস্তৃত ছিল। আরও কিছু অংশে, সিরিয়ার উত্তরের অঞ্চলও এই সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইতিহাস এবং বিকাশ:

প্রাথমিক যুগ:
ব্যবিলনীয় সভ্যতার সূচনা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ সালে হয়। প্রথম ব্যাবিলন সাম্রাজ্য গঠিত হয়, যার কেন্দ্র ছিল প্রথম ব্যাবিলন শহর, যা বর্তমানে ইরাকের বাগদাদের নিকটে অবস্থিত।
হামুরাবি (Hammurabi) নামক প্রখ্যাত রাজা এই সভ্যতার একটি উজ্জ্বল যুগের সূচনা করেন এবং তাঁর কোড অব লে (Hammurabi’s Code) নামে পরিচিত আইনসমূহ তৈরি করেন, যা ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন আইনপদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
মধ্য যুগ:
প্রথম ব্যাবিলন সাম্রাজ্যের পতন ঘটে খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ সালের দিকে, এরপর নিন্ভাহুরাসান (Ninurta-apla-iddina) এবং অন্যান্য রাজাদের অধীনে দ্বিতীয় ব্যাবিলন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা পায়।
নবিবাবিলনীয় যুগ: খ্রিস্টপূর্ব ৬ম শতাব্দীতে নিন্ভাহুরাসান II (Nebuchadnezzar II) এর অধীনে এই সাম্রাজ্য সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়। তিনি প্রখ্যাত বেবিলন টাওয়ার (হanging gardens) নির্মাণ করেন এবং বেবিলনের স্থাপত্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন।
পতন:
নিন্ভাহুরাসান II এর মৃত্যুর পর, দ্বিতীয় ব্যাবিলন সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে এবং 539 খ্রিস্টপূর্ব সালতে পারস্য সাম্রাজ্য দ্বারা ধ্বংস হয়। এইভাবে ব্যবিলনীয় সভ্যতা মেসোপটেমিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে থেকে যায়।
সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত অবদান:

লিপি ও সাহিত্য:
ব্যবিলনীয়রা কিউনিফর্ম লিপি (Cuneiform script) ব্যবহার করতেন, যা খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ সালে বিকশিত হয়েছিল। এই লিপি মাটি-টেবিলেটে খোদাই করে লেখা হত এবং প্রধানত প্রশাসনিক নথি, সাহিত্যকর্ম, এবং ধর্মীয় গ্রন্থ লেখার জন্য ব্যবহৃত হত।
গালাগালিয়ান (Epic of Gilgamesh) নামক প্রাচীন মহাকাব্য ব্যবিলনীয় সভ্যতার সাহিত্যিক ঐতিহ্যের অংশ।
ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা:
ব্যবিলনীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রধানত বিভিন্ন দেবতাদের পূজা এবং মন্দির নির্মাণের উপর ভিত্তি করে ছিল। তাদের প্রধান দেবতা ছিল মারুদেন (Marduk), যিনি বেবিলনের প্রধান দেবতা হিসেবে পূজা করা হত।
বেবিলনীয় মন্দির: বেবিলন শহরে অবস্থিত ইনান্না টাওয়ার (ইনান্না মন্দির) এবং অন্যান্য মন্দিরগুলি তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং পূজার কেন্দ্রস্থল ছিল।
স্থাপত্য ও ইঞ্জিনিয়ারিং:
ব্যবিলনীয়দের স্থাপত্যিক দক্ষতা অত্যন্ত উন্নত ছিল। তাদের মন্দির, গেটওয়ে, এবং বেবিলন টাওয়ারগুলি তাদের উন্নত ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্থাপত্য শৈলীর উদাহরণ।
পাথর-কাটা স্থাপত্য: বেবিলন শহরের প্রাচীনতম স্থাপত্যগুলির মধ্যে একটি হল ইনান্না মন্দির এবং বেবিলন টাওয়ার।
গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা:
ব্যবিলনীয়রা প্রাচীন গণিতের উপর ভিত্তি করে উন্নত জ্যোতির্বিদ্যা বিকাশ করেছিল। তারা বিভিন্ন জ্যোতির্বিদ্যার গণনা ও প্রক্ষেপণ পদ্ধতি উন্নত করেছিল, যা পরবর্তীকালে গ্রিক ও রোমান জ্যোতির্বিদ্যায় প্রভাব ফেলেছিল।
উপসংহার:

ব্যবিলনীয় সভ্যতা প্রাচীন মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের একটি উজ্জ্বল এবং উন্নত সভ্যতা ছিল, যা লিপি, স্থাপত্য, আইন, এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে বিশেষ অবদান রেখেছিল। তাদের প্রযুক্তিগত ও সাংস্কৃতিক অবদান মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। বেবিলনের মন্দির, আইন কোড, এবং সাহিত্যকর্মগুলি আজও গবেষক ও ইতিহাসবিদদের জন্য মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে।

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024

বিভাগসমূহ