কেন অ্যালার্জি হয়?

94 বার দেখাস্বাস্থ্যঅ্যালার্জি
0

কেন অ্যালার্জি হয়?

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024
0

অ্যালার্জি (Allergy) হলো শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া, যা সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন কিছু উপাদানের প্রতি প্রদর্শিত হয়। এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, যেমন কাশি, হাঁচি, চুলকানি, ফোলা, এবং আরও অনেক কিছু। নিচে অ্যালার্জির কারণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া
অ্যালার্জি মূলত শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। সাধারণত, ইমিউন সিস্টেম শরীরকে জীবাণু, ভাইরাস, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করে। তবে অ্যালার্জি ক্ষেত্রে, ইমিউন সিস্টেম অস্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট কিছু অ্যালার্জেন (Allergen) কে ক্ষতিকর হিসেবে ভুল করে চিনে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শুরু করে।

২. অ্যালার্জেনের প্রকার
অ্যালার্জেন হলো সেই সমস্ত উপাদান যা ইমিউন সিস্টেমকে উত্তেজিত করে। সাধারণ অ্যালার্জেনগুলোর মধ্যে রয়েছে:

ধুলিকণা (Dust mites)
পোড়া (Pollen)
প্রাণীর লোম (Animal dander)
খাদ্য পদার্থ (Food items)
কীটনাশক ও রাসায়নিক পদার্থ
ঔষধ (Medications)
৩. জেনেটিক প্রভাব
অ্যালার্জির প্রবণতা প্রায়শই বংশগত হয়। যদি আপনার পরিবারের মধ্যে কেউ অ্যালার্জিতে ভুগছেন, তাহলে আপনারও অ্যালার্জির সম্ভাবনা বেশি থাকে। নির্দিষ্ট জেনেটিক বৈশিষ্ট্য ইমিউন সিস্টেমকে কিছু নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের প্রতি অতিস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনে প্রভাব ফেলে।

৪. পরিবেশগত কারণ
পরিবেশগত ফ্যাক্টরগুলোও অ্যালার্জির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:

শিশু বয়সে অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালার্জেনের সংস্পর্শ: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, শিশু বয়সে বিভিন্ন অ্যালার্জেনের সংস্পর্শ অ্যালার্জির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
বায়ু দূষণ: দূষিত বায়ু ইমিউন সিস্টেমকে উত্তেজিত করে এবং অ্যালার্জির প্রবণতা বাড়াতে পারে।
হাইপো-অ্যালার্জেনিক ডায়েট: আধুনিক জীবনের পরিবর্তনের ফলে কিছু খাদ্য উপাদানের প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে গেছে।
৫. হাইজিন হাইপোথিসিস থিওরি
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, অতিরিক্ত হাইজিন (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) এবং জীবাণুমুক্ত পরিবেশ ইমিউন সিস্টেমকে যথাযথভাবে বিকশিত হতে বাধা দেয়, ফলে এটি অ্যালার্জেনের প্রতি অতিস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। অর্থাৎ, জীবাণুমুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা ইমিউন সিস্টেম কিছু নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে পারে।

৬. হরমোন এবং অন্যান্য শারীরিক কারণ
হরমোনের পরিবর্তন, যেমন গর্ভাবস্থা, মাসিক চক্র, বা থাইরয়েড সমস্যা অ্যালার্জির উপসর্গকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়াও, অন্যান্য শারীরিক রোগ, যেমন অ্যাজমা বা রাইনাইটিস, অ্যালার্জির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

৭. জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাস
আধুনিক জীবনধারায়, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, যেমন দ্রুত খাদ্য গ্রহণ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়া, এবং খাদ্যের বৈচিত্র্য কম হওয়া অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। এছাড়াও, স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে, যা অ্যালার্জির সম্ভাবনা বাড়ায়।

উপসংহার
অ্যালার্জি হলো শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অতিস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যা বিভিন্ন জেনেটিক, পরিবেশগত, এবং শারীরিক কারণের ফলে ঘটে। অ্যালার্জির প্রতিকার এবং প্রতিরোধের জন্য অ্যালার্জেনের সংস্পর্শ কমানো, ইমিউন থেরাপি, এবং মেডিক্যাল ট্রীটমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। অ্যালার্জির উপসর্গগুলো গুরুতর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে উপযুক্ত চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা করা যায়।

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024

বিভাগসমূহ