নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের কারণ কী?

71 বার দেখাইতিহাসসিরাজউদ্দৌলা
0

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের কারণ কী?

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024
0

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করেছে, যা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পরবর্তী সময়ে বাংলা অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতার অংশ। নিচে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের প্রধান কারণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. রাজনৈতিক অস্থিরতা
সামরিক ও রাজনৈতিক দুর্বলতা: সিরাজউদ্দৌলার শাসনের সময় রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্বলতা ছিল। তাঁর সরকারবিরোধী শক্তি এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার কারণে রাজ্যের স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন হয়।
২. বিশ্বাসঘাতকতা
মীর জাফরের ষড়যন্ত্র: নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফর ব্রিটিশদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেন। তিনি সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য প্রস্তুত হন এবং ব্রিটিশদের সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন।
৩. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য
বাণিজ্যিক শোষণ: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে বাংলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে। তারা সিরাজউদ্দৌলার ক্ষমতা ও প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করে।
৪. পলাশীর যুদ্ধ (১৭৫৭)
যুদ্ধের ফল: ২৩ জুন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে পরাজিত হন। এই যুদ্ধ তাঁর পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিভক্তি এবং ব্রিটিশ বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহারের কারণে তিনি পরাজিত হন।
৫. জনসমর্থনের অভাব
জনসাধারণের অসন্তোষ: নবাব সিরাজউদ্দৌলার শাসনে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। কিছু লোক তাঁর শাসনকালকে অত্যাচারী মনে করত, যা ব্রিটিশদের সমর্থনে নেতৃত্ব দানে সহায়ক হয়।
৬. সামরিক দুর্বলতা
সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি: সিরাজউদ্দৌলার সেনাবাহিনীকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করা হয়নি। ব্রিটিশদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তাঁর সেনাবাহিনী কার্যকরভাবে সংগঠিত হতে পারেনি।
৭. প্রশাসনিক দুর্বলতা
প্রশাসনিক অদক্ষতা: সিরাজউদ্দৌলার প্রশাসনিক ব্যবস্থা দুর্বল ছিল এবং এ কারণে তিনি তাঁর রাজ্যকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন।
৮. আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি
বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের শক্তি বৃদ্ধি পায়, যা উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলে। ব্রিটিশরা সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুবিধা গ্রহণ করে।
৯. প্রবীণদের সমর্থনহীনতা
বৃদ্ধাশ্রয়ী শ্রেণির অবহেলা: নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রবীণ এবং প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক নেতাদের সমর্থন পাননি, যার ফলে তার শাসন দুর্বল হয়।
১০. অর্থনৈতিক সংকট
রাজস্ব সংগ্রহে অসুবিধা: সিরাজউদ্দৌলার রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ ছিল। রাজস্ব সংগ্রহে সমস্যার কারণে সরকারের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
উপসংহার
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন ছিল একাধিক কারণে সৃষ্ট একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা বাংলার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। তাঁর পতনের ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় শাসন প্রতিষ্ঠা করে, যা পরবর্তীতে সমগ্র ভারতবর্ষের উপর তাদের শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে। সিরাজউদ্দৌলার পতন এবং তার পরবর্তী প্রভাব আজও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024

বিভাগসমূহ