ভারতের পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হয়?

23 বার দেখারাজনীতিপঞ্চায়েত ভারত
0

ভারতের পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হয়?

মুহাম্মদ ইকবাল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024
0

ভারতের পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থা হল গ্রামীণ স্থানীয় স্বশাসন ব্যবস্থা, যা গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এটি তিন-স্তরীয় প্রশাসনিক কাঠামো যা গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি (মন্ডল বা তালুক স্তর) এবং জেলা পরিষদ নিয়ে গঠিত। ১৯৯২ সালে ৭৩তম সংবিধান সংশোধনী আইনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

প্রধান স্তরসমূহ ও তাদের কার্যাবলি
১. গ্রাম পঞ্চায়েত (Village Panchayat):

গঠন: প্রত্যেক গ্রামে বা গ্রামসমষ্টিতে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয়। সদস্যরা সরাসরি গ্রামের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন।
কার্যাবলি:
স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা: রাস্তা নির্মাণ, পানীয় জল সরবরাহ, নিকাশি ব্যবস্থা।
সামাজিক কল্যাণ: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু বিকাশ।
কৃষি ও পশুপালন: কৃষি উন্নয়ন, পশুচিকিৎসা সেবা।
রাজস্ব সংগ্রহ: স্থানীয় কর আরোপ ও সংগ্রহ।
২. পঞ্চায়েত সমিতি (Block or Panchayat Samiti):

গঠন: ব্লক বা মন্ডল স্তরে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির প্রতিনিধি ও নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত।
কার্যাবলি:
সমন্বয় ও নজরদারি: গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির কার্যক্রম সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণ।
উন্নয়ন পরিকল্পনা: ব্লক স্তরের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি: পঞ্চায়েত সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান।
৩. জেলা পরিষদ (Zilla Parishad):

গঠন: জেলার সকল পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্য ও সংসদীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত।
কার্যাবলি:
জেলা পর্যায়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো উন্নয়ন।
সমন্বয়: জেলা পর্যায়ে সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সমন্বয় করা।
নজরদারি: পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ।
সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও বৈশিষ্ট্য
৭৩তম সংবিধান সংশোধনী আইন, ১৯৯২:

সাংবিধানিক স্বীকৃতি: পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থাকে সংবিধানের অংশ করা হয়।
সময়মত নির্বাচন: প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন বাধ্যতামূলক করা হয়।
সংরক্ষণ: মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণ, এছাড়া তফসিলি জাতি ও উপজাতির জন্য সংরক্ষণ।
নির্ধারিত ক্ষমতা: একাদশ তফসিলে ২৯টি বিষয়ে পঞ্চায়েতদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়।
নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্ব
নির্বাচন কমিশন: রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটাধিকার: প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
প্রতিনিধিত্ব: সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সদস্যরা নির্বাচিত হন।
আর্থিক ব্যবস্থা
রাজস্ব সংগ্রহ: স্থানীয় কর, ফি ও টোল আদায়ের ক্ষমতা রয়েছে।
সরকারি অনুদান: কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়া যায়।
আর্থিক কমিশন: রাজ্য আর্থিক কমিশন পঞ্চায়েতদের অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করে।
পঞ্চায়েতদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা
উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন: স্থানীয় স্তরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন।
সামাজিক বিচার: সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ।
সেবা প্রদান: স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল, স্যানিটেশন ইত্যাদি সেবা প্রদান।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
চ্যালেঞ্জ:

ক্ষমতা হস্তান্তর: অনেক রাজ্যে পঞ্চায়েতদের পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্রদান করা হয় না।
আর্থিক সীমাবদ্ধতা: পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব।
দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাব: প্রশাসনিক দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার ঘাটতি।
ক্ষমতায়নের অভাব: মহিলাদের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে সীমাবদ্ধতা।
সমাধান:

ক্ষমতা ও দায়িত্ব স্পষ্ট করা: পঞ্চায়েতদের নির্দিষ্ট ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রদান।
আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি: তহবিল বরাদ্দ বৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতা উৎসাহিত করা।
প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা: পঞ্চায়েত সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ।
উপসংহার
ভারতের পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থা গ্রামীণ এলাকার মানুষের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সঠিক বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক সমর্থনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থা গ্রামীণ ভারতের উন্নয়নে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে।

মুহাম্মদ ইকবাল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024

বিভাগসমূহ