ভারতের ফেডারেল ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে?

74 বার দেখারাজনীতিভারত
0

ভারতের ফেডারেল ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে?

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024
0

ভারতের ফেডারেল ব্যবস্থা একটি জটিল এবং অনন্য কাঠামো, যা কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ভারতের সংবিধান একটি ফেডারেল সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই নির্দিষ্ট ক্ষমতা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত।

১. সংবিধানের মাধ্যমে ফেডারেল কাঠামো
ভারতের সংবিধান (১৯৫০ সালে কার্যকর) দেশের ফেডারেল কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করে। সংবিধান কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন নির্ধারণ করে।

২. ক্ষমতার বিভাজন
ভারতের ফেডারেল ব্যবস্থায় ক্ষমতা তিনটি মূল তালিকার মাধ্যমে বিভাজিত হয়েছে:

কেন্দ্রীয় তালিকা (Union List): এই তালিকায় ৯৭টি বিষয় রয়েছে, যেমন প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, ব্যাংকিং, এবং যোগাযোগ। এই বিষয়গুলোতে শুধুমাত্র সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে।
রাজ্য তালিকা (State List): এখানে ৬৬টি বিষয় রয়েছে, যেমন পুলিশ, স্বাস্থ্য, কৃষি, এবং স্থানীয় সরকার। রাজ্য বিধানসভা এই বিষয়গুলোতে আইন প্রণয়ন করতে পারে।
সমবর্তিত তালিকা (Concurrent List): এই তালিকায় ৪৭টি বিষয় রয়েছে, যেমন শিক্ষা, বন, শ্রম, এবং বিদ্যুৎ। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই এই বিষয়গুলোতে আইন প্রণয়ন করতে পারে। তবে কোনো দ্বন্দ্ব দেখা দিলে কেন্দ্রের আইন প্রাধান্য পাবে।
৩. কেন্দ্রীয় সরকার
রাষ্ট্রপতি: রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান, তবে বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত।
প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা: কার্যনির্বাহী প্রধান এবং সরকারের নীতিনির্ধারণ ও কার্যকরীতে নেতৃত্ব দেন।
সংসদ: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ (লোকসভা ও রাজ্যসভা) আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করে।
৪. রাজ্য সরকার
রাজ্যপাল: প্রতিটি রাজ্যে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিরূপে রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। তিনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান।
মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা: রাজ্যের কার্যনির্বাহী প্রধান মুখ্যমন্ত্রী, যিনি মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব দেন।
বিধানসভা: রাজ্যের আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করে।
৫. বিচার ব্যবস্থা
সুপ্রিম কোর্ট: দেশের সর্বোচ্চ আদালত, যা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইনসমূহের সাংবিধানিক বৈধতা নির্ণয় করে।
উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালত: প্রতিটি রাজ্যে উচ্চ আদালত এবং তার অধীনে নিম্ন আদালত রয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।
৬. আর্থিক সম্পর্ক
আর্থিক কমিশন: কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে রাজস্ব বণ্টনের জন্য প্রতি পাঁচ বছরে একবার আর্থিক কমিশন গঠিত হয়।
কেন্দ্র থেকে রাজ্যে অনুদান: কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প ও উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য রাজ্য সরকারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
৭. সমন্বয় ও সহযোগিতা
আন্তঃরাজ্য পরিষদ: কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে নীতি নির্ধারণ ও সমন্বয়ের জন্য আন্তঃরাজ্য পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
এনআইটিআই আয়োগ: পূর্ববর্তী পরিকল্পনা কমিশনের স্থলে এনআইটিআই আয়োগ গঠিত হয়েছে, যা কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে নীতি ও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় সহযোগিতা করে।
৮. বিশেষ রাজ্য ও অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন
জম্মু ও কাশ্মীর: সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ (বর্তমানে বাতিল) জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছিল।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহ: কিছু রাজ্যে বিশেষ সাংবিধানিক স্বীকৃতি রয়েছে, যা তাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক স্বাতন্ত্র্যকে রক্ষা করে।
৯. সাংঘাতিক ক্ষমতা ও জরুরি অবস্থা
রাষ্ট্রপতির শাসন: সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাজ্যে সাংবিধানিক যন্ত্র ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রপতি সেখানে শাসন জারি করতে পারেন।
জরুরি অবস্থা: দেশের নিরাপত্তা বা অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে কেন্দ্রীয় সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে, যা ফেডারেল কাঠামোকে সাময়িকভাবে পরিবর্তন করতে পারে।
১০. সংবিধানের সংশোধনী
ফেডারেল কাঠামোর সুরক্ষা: সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করা যায় না। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, ফেডারেল কাঠামো সংবিধানের মৌলিক অংশ।
উপসংহার
ভারতের ফেডারেল ব্যবস্থা কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য ও সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি দেশের বহুমুখী সংস্কৃতি, ভাষা, এবং জনগণের চাহিদাকে সমন্বয় করে একটি সুসংহত প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলেছে। ফেডারেল ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারত তার জাতীয় ঐক্য বজায় রেখে আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছে।

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024

বিভাগসমূহ