ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক নীতি কী?

20 বার দেখারাজনীতিভারত
0

ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক নীতি কী?

আব্দুল আজিজ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে
0

ভারত, বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি, গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জন করেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক নীতি দেশের স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য নিয়ে গঠিত। সরকারের নীতি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।

প্রধান অর্থনৈতিক নীতিসমূহ
১. অর্থনৈতিক সংস্কার ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ

মেক ইন ইন্ডিয়া: দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার জন্য এই উদ্যোগ চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো এবং রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধি করা লক্ষ্য।
দলিলমুক্ত জায়গা: সহজ কর ব্যবস্থা এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য দলিলমুক্ত জায়গার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডিজিটাল ইন্ডিয়া: ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন, ই-গভর্নেন্স এবং ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করা।
২. কর নীতি ও রিফর্মস

গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (GST): দেশের জটিল কর কাঠামোকে সরলীকরণ এবং অভ্যন্তরীণ বাজারকে সমন্বিত করার জন্য GST প্রবর্তন করা হয়েছে।
ইনকর রিফর্মস: করযোগ্য আয়ের বর্ধিত সীমা, কর ছাড় এবং নতুন কর নীতির মাধ্যমে কর সংগ্রহ বৃদ্ধি ও করদাতাদের সুবিধা প্রদান।
৩. ফিস্কাল নীতি ও বাজেট

সরকারি ব্যয়: অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলিতে ব্যয় বৃদ্ধি।
দরিদ্রতা বিমোচন: বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সহায়তা করা।
বাজেট ব্যালেন্স: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখে বাজেটের ভারসাম্য রক্ষা করা।
৪. মুদ্রানীতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা

রিজার্ভ ব্যাংকের ভূমিকা: মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার নির্ধারণ এবং আর্থিক বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারে নজর: মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা।
৫. বৈদেশিক নীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য

বৈদেশিক সরবরাহ বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।
বাণিজ্য বৈচিত্র্য: বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বিস্তৃত করা এবং বহুমুখী বাণিজ্য নীতির অনুসরণ।
৬. টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ

রিনিউএবল এনার্জি: সৌর ও বায়ু শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কার্বন নির্গমন কমানো।
পরিবেশ সংরক্ষণ: পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নীতি ও প্রকল্প গ্রহণ।
৭. সামাজিক নীতি ও অন্তর্ভুক্তি

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা: স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মান উন্নয়ন, সকল নাগরিকের জন্য সহজলভ্য করে তোলা।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি: নতুন শিল্পখাত উন্নয়ন, দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং উদ্যোক্তা সাপোর্ট প্রদান।
৮. প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন

স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম: নতুন উদ্ভাবনী ব্যবসা ও প্রযুক্তিগত উদ্যোগকে উৎসাহিত করা।
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আইটি এবং ডিজিটাল সেক্টরে প্রবৃদ্ধি।
সাম্প্রতিক উদ্যোগ ও নীতিসমূহ
১. কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা

স্টিমলাইন অর্থনীতি: কোভিড-১৯ মহামারীর পর্থকালে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে স্টিমলাইন পরিকল্পনা গ্রহণ।
স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ: স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
২. নয়া উৎপাদন নীতি

ইন্ডাস্ট্রি ৪.০: আধুনিক প্রযুক্তি ও অটোমেশনকে অন্তর্ভুক্ত করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি।
এটমনির্ভর ভারত (Atmanirbhar Bharat): দেশীয় উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য স্বনির্ভর নীতি গ্রহণ।
৩. ব্যাংকিং ও আর্থিক নীতির সংস্কার

গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক রিফর্মস: ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নতুন নীতিমালা গ্রহণ।
ফিনটেক ও ডিজিটাল লেনদেন: আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে ফিনটেক সমাধানগুলির উন্নয়ন।
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
১. অর্থনৈতিক অসমতা

আয় বৈষম্য: দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
গ্রামীণ ও শহুরে বৈষম্য: গ্রামীণ ও শহুরে অঞ্চলের মধ্যে উন্নয়নের পার্থক্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. কর্মসংস্থান সংকট

বেকারত্বের হার: উচ্চ বেকারত্বের হার যুব সমাজের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিমাণ: পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির অভাব থাকায় অনেকে নৈর্ব্যক্তিক কাজে প্রবেশ করছে।
৩. পরিবেশগত সমস্যা

দুর্ব্যবহার ও দূষণ: শিল্পায়নের ফলে পরিবেশগত দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, যেমন প্রচুর বৃষ্টিপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনীতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
৪. প্রশাসনিক ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ

কর্পোরেট প্রশাসন: কর্পোরেট খাতের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি, করপোরেট করের প্রণালী ও কর্মক্ষমতা।
নীতিগত অস্থিতিশীলতা: নীতিগত অস্থিতিশীলতা ও পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপসংহার
ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক নীতি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে কেন্দ্রিত। বিভিন্ন খাতে নিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন, বিনিয়োগ আকর্ষণ, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, সামাজিক কল্যাণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, অর্থনৈতিক অসমতা, কর্মসংস্থান সংকট, পরিবেশগত সমস্যা এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। সরকার, বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ভারতের অর্থনৈতিক নীতি দেশের স্থায়িত্ব ও প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করবে বলে আশা করা যায়।

নোট: ভারতের অর্থনৈতিক নীতি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। সর্বশেষ তথ্য ও নীতিগত পরিবর্তনের জন্য সরকারী সূত্র ও বিশ্বস্ত সংবাদ মাধ্যমের উপর নির্ভর করা উচিত।

আব্দুল আজিজ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে

বিভাগসমূহ