বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের পদক্ষেপ কী?

29 বার দেখারাজনীতিনারী বাংলাদেশ সরকার
0

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের পদক্ষেপ কী?

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে
0

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে সরকার বিভিন্ন স্তরে এবং নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপগুলি শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং আইনি দিক থেকে নারীদের ক্ষমতায়ন এবং সমানাধিকার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। নিচে বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের প্রধান পদক্ষেপগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
a. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা:

শিক্ষা মন্ত্রণালয় নারী শিক্ষার প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। সরকার বিভিন্ন অনুদান ও বৃত্তির মাধ্যমে কন্যাদের স্কুলে শিক্ষালাভ নিশ্চিত করছে।
ক্যাম্পাস ও কলেজে কো-অপারেটিভ শিক্ষা: সরকার মহিলা ছাত্রদের জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ এবং অনুদান প্রদান করে তাদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে সহায়তা করছে।
b. উচ্চ শিক্ষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণ:

বহুস্তরীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: বিশ্ববিদ্যালয় এবং পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানে নারীদের ভর্তির হার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প: নারীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করা হয়েছে, যেমন ওয়ার্কপ্লেস ট্রেনিং এবং এন্টারপ্রেনারশিপ প্রোগ্রাম।
২. অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন
a. মাইক্রোফাইন্যান্স ও ক্ষুদ্রঋণ:

গ্রামীণ ব্যাংক ও মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান: নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে বিকাশে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনে সহায়তা করা হচ্ছে।
শিল্প এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ: নারীদের জন্য বিভিন্ন হস্তশিল্প ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রবৃদ্ধি ঘটানো হয়েছে।
b. কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উদ্যোগ:

কর্মসংস্থান নীতি: সরকারি ও বেসরকারি খাতে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্ত্রীশক্তি প্রকল্প: নারীদের ব্যবসা শুরু করতে এবং পরিচালনা করতে সহায়তা করার জন্য বিশেষ প্রকল্প পরিচালনা করা হয়েছে।
৩. স্বাস্থ্য ও সুস্থতা
a. স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা:

মাদার এবং শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন: নারীদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
গণস্বাস্থ্য প্রোগ্রাম: প্রতিরোগী রোগ নিরাময় এবং স্বাস্থ্যের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন গণস্বাস্থ্য কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়েছে।
b. মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা:

মানসিক স্বাস্থ্য সেবা: নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ প্রোগ্রাম ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা: নারীদের মানসিক চাপ কমাতে এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
৪. আইন ও নীতি
a. নারী অধিকার সংরক্ষণ আইন:

বিবাহ আইন: বাল্যবিবাহ রোধ ও বিবাহবিচ্ছেদ সহজতর করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
পরিবার আইন: নারীদের অধিকার সংরক্ষণ এবং সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন আইন বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
b. হিংসা প্রতিরোধ আইন:

ধর্ষণ ও নির্যাতন রোধ: নারীদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও হিংসা রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
নির্যাতিত নারীদের সুরক্ষা: নির্যাতিত নারীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বিশেষ শরণার্থী কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
৫. রাজনৈতিক অংশগ্রহণ
a. রেসিভ কোটা:

পার্লামেন্টে নারী প্রতিনিধিত্ব: জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন রেসিভ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকারের স্তরে নারী অংশগ্রহণ: পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কোটা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
b. রাজনৈতিক সচেতনতা ও নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ:

নারী নেতাদের প্রশিক্ষণ: নারীদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা পরিচালনা করা হয়েছে।
সচেতনতা বৃদ্ধি: নারীদের রাজনৈতিক অধিকার ও অংশগ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে।
৬. সামাজিক সচেতনতা ও সংস্কৃতি
a. সামাজিক নীতি ও প্রচার:

নারী সশক্তিকরণ প্রচার: বিভিন্ন মিডিয়া ও প্রচারণার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
সামাজিক স্টিগমা দূরীকরণ: নারীদের প্রতি সামাজিক পক্ষপাতিত্ব ও ভেদাভেদ দূর করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
b. ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম:

নারী ক্রীড়া উন্নয়ন: নারীদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সাংস্কৃতিক প্রকল্প: নারীদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করা হয়েছে।
৭. প্রযুক্তি ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি
a. ডিজিটাল শিক্ষা ও দক্ষতা:

ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম: নারীদের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
অনলাইন উদ্যোক্তা উদ্যোগ: নারীদের অনলাইন ব্যবসা ও ই-কমার্সে অংশগ্রহণে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে।
b. টেকনোলজির মাধ্যমে নিরাপত্তা:

সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা: নারীদের সাইবার হিংসা ও অনলাইন নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
নিরাপত্তা অ্যাপ ও সেবা: নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ এবং সেবা চালু করা হয়েছে।
উপসংহার
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের পদক্ষেপগুলি ব্যাপক এবং বহুমাত্রিক। শিক্ষা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, আইন, রাজনীতি, সামাজিক সচেতনতা এবং প্রযুক্তি সহ নানা ক্ষেত্রে নারীসমাজের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, এই পদক্ষেপগুলির কার্যকর বাস্তবায়ন এবং সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন আনতে আরও প্রচেষ্টা এবং সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে নারীসমাজ পুরোপুরি ক্ষমতায়ন পায় এবং সমানাধিকার নিশ্চিত হয়।

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে

বিভাগসমূহ