দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে শুরু হয়? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল কী হয়েছিলো?

1.11K বার দেখাইতিহাসবিশ্বযুদ্ধ
0

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে শুরু হয়? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল কী হয়েছিলো?

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024
0

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (World War II) ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে শুরু হয় এবং এটি ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই যুদ্ধটি বিশ্বব্যাপী সংঘটিত হয়েছিল এবং এতে অধিকাংশ প্রধান জাতিসংঘের দেশ অংশগ্রহণ করেছিল, যার মধ্যে ছিল অক্ষগোষ্ঠী (Axis Powers) এবং সহযোগী গোষ্ঠী (Allied Powers)।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা:

আর্মেনিয়া আক্রমণ:
জাপানের আক্রমণ: ৭ ডিসেম্বর ১৯১৪ সালে জাপান পেরল হারবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনার উপর আক্রমণ করে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধবিরোধী অবস্থায় নিয়ে আসে।
জার্মানির পোল্যান্ডে আগ্রাসন: ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে জার্মানি পোল্যান্ডে আক্রমণ শুরু করে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সরাসরি সূচনা ঘটে। এর পরেই যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান ঘটনা:

আর্মেনিয়া যুদ্ধের বিস্তার:
জার্মানি ইতালি, জাপান সহ অন্যান্য অক্ষগোষ্ঠীর সাথে মিলিত হয়ে বিভিন্ন দেশ আক্রমণ করে।
১৯৪১ সালে জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে (বার্বেরোসা অপারেশন) এবং জাপান যুক্তরাষ্ট্রের পেরল হারবার আক্রমণ অব্যাহত রাখে।
প্রধান লড়াই:
স্টালিনগ্রাদ যুদ্ধ: সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং জার্মানির মধ্যে একটি প্রধান যুদ্ধ, যা ১৯৪২ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং জার্মান বাহিনীকে পরাজিত করে।
নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ডের যুদ্ধ: জার্মানি এই দেশগুলিতে আক্রমণ চালায়, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের সাপোর্টে ফিনল্যান্ড কিছুটা সুরক্ষিত থাকে।
আফ্রিকা ক্যাম্পেইন: অক্ষগোষ্ঠীর বাহিনী উত্তর আফ্রিকায় জার্মানির নেতৃত্বাধীন মোটাহচিহ বাহিনী নিয়ে লড়াই করে।
ইন্দিয়ান ওচ্ছে যুদ্ধ: জাপানের বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে আক্রমণ চালায়।
ডেরি ডোব এবং ইওরোপে মুক্তি:
১৯৪৪ সালের জুনে নরমডের ডোব অভিযান শুরু হয়, যা সহযোগী বাহিনীকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশ করতে সহায়তা করে।
১৯৪৫ সালের মে মাসে জার্মানি আনুগত্য করে এবং ইউরোপীয় যুদ্ধ শেষ হয়।
পেরল হারবার এবং এশিয়ায় মুক্তি:
১৯৪৫ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ করে, যার ফলে জাপান আনুগত্য করে এবং যুদ্ধ শেষ হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল:

বৃহত্তর ক্ষয়ক্ষতি:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে প্রায় ৭০-৮০ মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়, যার মধ্যে ছিল সৈনিক এবং নিরপরাধ মানুষ।
বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে, যেমন হলোকাস্ট, যেখানে প্রায় ৬ মিলিয়ন ইহুদী নিহত হয়।
রাজনৈতিক পরিবর্তন:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী বিশ্ব বিন্যাস: যুদ্ধের পরে বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত হয় – পশ্চিমা ব্লক (ন্যাটো) এবং পূর্ব ব্লক (ওস্তালি ব্লক)। এটি কোল্ড ওয়ার নামে পরিচিত।
জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা: শান্তি রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।
অর্থনৈতিক পরিবর্তন:
যুদ্ধের ফলে অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়, বিশেষ করে ইউরোপ এবং এশিয়া।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করে।
প্রযুক্তিগত অগ্রগতি:
যুদ্ধের সময় অনেক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়, যেমন রকেট প্রযুক্তি, পরমাণু শক্তি, এবং কম্পিউটার প্রযুক্তি।
চিকিৎসা এবং জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়, যেমন অ্যান্টিবায়োটিকস এবং মেডিকেল সরঞ্জাম।
সামাজিক পরিবর্তন:
মহিলারা এবং অন্যান্য পুরুষশ্রমিকদের বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে, যা পরবর্তীতে সমাজে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে।
যুদ্ধের অভিজ্ঞতা মানুষের চিন্তা-ভাবনা এবং মূল্যবোধকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
বিবিধ দেশগুলির স্বাধীনতা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেক উপনিবেশ দেশ স্বাধীনতা লাভ করে এবং তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিশেষ করে আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশে অনেক নতুন স্বাধীন দেশ উন্মুক্ত হয়।
উপসংহার:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী এবং ব্যাপক যুদ্ধগুলির মধ্যে অন্যতম। এর ফলে বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ এবং প্রযুক্তিতে গভীর পরিবর্তন ঘটে। যুদ্ধের পরবর্তী বিশ্ব বিন্যাস এবং জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা বিশ্ব শান্তি এবং সহযোগিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে, এর ফলে মানুষের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ঘটেছে, যা মানবজাতির জন্য একটি শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে রয়ে গেছে।

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024

বিভাগসমূহ