সিলেটি ও চাটগাঁইয়া উপভাষার বৈশিষ্ট্য কী?

20 বার দেখাভাষাউপভাষা চাটগাঁইয়া সিলেটি
0

সিলেটি ও চাটগাঁইয়া উপভাষার বৈশিষ্ট্য কী?

ফয়সাল কবীর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 11, 2024
0

সিলেটি এবং চাটগাঁইয়া উপভাষা বাংলা ভাষার দুটি উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক রূপ, যা যথাক্রমে সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। এ দুটি উপভাষা বাংলা ভাষার প্রধান রূপ থেকে কিছুটা ভিন্ন, এবং তাদের নিজস্ব ধ্বনিতাত্ত্বিক, শব্দার্থিক ও বাক্যগঠনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে এই দুটি উপভাষার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো:

সিলেটি উপভাষার বৈশিষ্ট্য:
সিলেটি উপভাষা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সিলেট বিভাগে ব্যবহৃত হয়। এটি বাংলা ভাষার একটি আঞ্চলিক রূপ হলেও, অনেক সময় এটি আলাদা ভাষার স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি তোলে, কারণ এর শব্দতত্ত্ব এবং ধ্বনিতত্ত্ব মূল বাংলা ভাষা থেকে কিছুটা আলাদা।

১. ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্য:

স্বতন্ত্র স্বরধ্বনি: সিলেটি ভাষায় বেশ কিছু ধ্বনি (স্বর) বাংলার সাধারণ স্বরধ্বনির চেয়ে আলাদা। বিশেষ করে, বাংলা ভাষায় “অ” বা “ও” ধ্বনিগুলো সিলেটি ভাষায় ভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়।
যেমন: “আমি” সিলেটি ভাষায় হয় “আংই”, “তুমি” হয় “তুঁই”।
নাসালাইজেশন: সিলেটি ভাষায় নাসালাইজড ধ্বনির প্রচলন রয়েছে। নাসালাইজেশন বলতে বোঝায় নাক দিয়ে উচ্চারিত স্বরধ্বনি।
যেমন: “খাই” শব্দটি সিলেটিতে হয় “খাঁই”।
২. ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য:

অব্যয় ক্রিয়া: সিলেটি উপভাষায় ক্রিয়াপদের শেষে “-ই”, “-ও”, এবং “-র” এর মতো ধ্বনি যোগ করা হয়।
উদাহরণ: “যাব” বাংলায়, সিলেটিতে হয় “যাইমু” বা “যামু”।
অতীত এবং ভবিষ্যৎ ক্রিয়ার পার্থক্য: সিলেটি ভাষায় অতীত এবং ভবিষ্যৎ ক্রিয়ার গঠন বাংলার সাধারণ গঠন থেকে ভিন্ন।
যেমন: “আমি খেয়েছি” সিলেটিতে হয় “আংই খাঁইছো”।
৩. শব্দার্থিক বৈশিষ্ট্য:

স্বতন্ত্র শব্দভাণ্ডার: সিলেটি ভাষায় বেশ কিছু শব্দ রয়েছে, যা মূল বাংলার থেকে আলাদা। অনেক শব্দ আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি থেকে ধার করা হয়েছে।
উদাহরণ: “বাড়ি” (বাংলা), সিলেটিতে হয় “ঘর”।
অল্পস্বীকৃত শব্দ: সিলেটি ভাষায় প্রচুর আঞ্চলিক এবং দেশীয় শব্দ রয়েছে, যা মূল বাংলা ভাষায় কম ব্যবহৃত হয় বা প্রচলিত নয়।
৪. অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

মহিলাদের মধ্যে পৃথক রূপ: সিলেটি ভাষায় মহিলাদের ব্যবহৃত কিছু বিশেষ রূপ আছে, যা পুরুষদের ভাষার থেকে আলাদা।
যেমন: পুরুষরা বলে “খাইছো”, মহিলারা বলে “খাইছি”।
চাটগাঁইয়া উপভাষার বৈশিষ্ট্য:
চাটগাঁইয়া উপভাষা চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়, যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত। এটি বাংলা ভাষার আরেকটি বিশেষ রূপ, যা ধ্বনি, শব্দগঠন এবং বাক্যগঠনের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বহন করে।

১. ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্য:

স্বরবর্ণের পরিবর্তন: চাটগাঁইয়া ভাষায় স্বরবর্ণের উচ্চারণ মূল বাংলা ভাষার তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন।
যেমন: “তুমি” হয় “তুঁই”, “আমি” হয় “আঁই”।
ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন: চাটগাঁইয়া ভাষায় ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন দেখা যায়। বিশেষ করে, “খ” বা “চ” ধ্বনি উচ্চারণে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।
যেমন: “খেতে” হয় “হইতে”, “চলো” হয় “হালো”।
২. ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য:

ব্যাকরণগত সরলীকরণ: চাটগাঁইয়া ভাষায় বাংলা ভাষার ক্রিয়ার গঠন কিছুটা সরল হয়।
যেমন: “আমি যাচ্ছি” হয় “আঁই যাইতাম”।
কালের ভিন্নতা: চাটগাঁইয়া ভাষায় অতীত এবং ভবিষ্যৎ কালের ক্রিয়ার গঠন ভিন্ন। ভবিষ্যৎ কালে “ম” বা “মু” যোগ করা হয়।
যেমন: “যাব” হয় “যামু”।
৩. শব্দার্থিক বৈশিষ্ট্য:

অনন্য শব্দভাণ্ডার: চাটগাঁইয়া ভাষায় প্রচুর দেশীয় এবং আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহৃত হয়, যা সাধারণ বাংলায় কম দেখা যায়।
যেমন: “বাড়ি” হয় “ঘর”, “খাও” হয় “ভোজন”।
আরবি, ফারসি, এবং বর্মি ভাষার প্রভাব: চাটগাঁইয়া ভাষায় ফারসি, আরবি এবং বর্মি ভাষার প্রভাবও দেখা যায়। এই কারণে অনেক বিদেশি শব্দ চাটগাঁইয়া উপভাষায় ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: “দরজা” চাটগাঁইয়ায় হয় “দোর”।
৪. অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

সংক্ষেপণের প্রবণতা: চাটগাঁইয়া ভাষায় অনেক শব্দ সংক্ষেপিত হয়।
যেমন: “কি খবর?” হয় “খবর কী?”।
আগ্রাসী স্বরধ্বনি: চাটগাঁইয়া ভাষায় অনেক শব্দের উচ্চারণ আক্রমণাত্মক এবং দ্রুত হয়, যা অন্য বাংলা উপভাষাগুলোর তুলনায় কিছুটা আলাদা।
সারসংক্ষেপ:
সিলেটি এবং চাটগাঁইয়া উপভাষা উভয়ই তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিকশিত হয়েছে। সিলেটি ভাষার নাসালাইজড ধ্বনি এবং আরবি-ফারসি প্রভাবের পাশাপাশি এর ক্রিয়া এবং শব্দগঠনের ভিন্নতা এটিকে স্বতন্ত্র করেছে। অন্যদিকে, চাটগাঁইয়া ভাষার ধ্বনিগত সরলীকরণ, দেশীয় শব্দ এবং বহিরাগত প্রভাব (বর্মি ও আরবি) এটিকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছে।

ফয়সাল কবীর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 11, 2024

বিভাগসমূহ