ভারতের হোলি উৎসবের ঐতিহ্য ও তাৎপর্য কী?

0

ভারতের হোলি উৎসবের ঐতিহ্য ও তাৎপর্য কী?

আব্দুল আজিজ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 6 দিন পূর্বে
0

হোলি ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় এবং রঙিন উৎসব, যা প্রধানত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পালন করা হয়। এই উৎসবটি বসন্তের আগমনে উদযাপন করা হয় এবং এর মাধ্যমে শীতকালকে বিদায় জানিয়ে বসন্তকে স্বাগত জানানো হয়। হোলি উৎসব কেবল রঙের উৎসব নয়, এটি সমাজের ভেদাভেদ দূর করে সকলকে একত্রে উদযাপনের সুযোগ করে দেয়। হোলি মূলত ভালো এবং মন্দের মধ্যে সংগ্রামে মন্দের পরাজয়ের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়।

হোলি উৎসবের ঐতিহ্য ও তাৎপর্য:
১. ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা ও হোলিকা দাহন:
হোলির পেছনে অন্যতম জনপ্রিয় পৌরাণিক কাহিনি হলো প্রহ্লাদ ও হোলিকার গল্প। পৌরাণিক মতে, অসুর রাজা হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ভগবান বিষ্ণুর প্রতি অত্যন্ত ভক্তিশীল ছিলেন। কিন্তু হিরণ্যকশিপু ছিলেন বিষ্ণুর বিরোধী। নিজের পুত্রকে বিষ্ণুর পূজা থেকে বিরত করতে ব্যর্থ হয়ে, হিরণ্যকশিপু তার বোন হোলিকার সাহায্য নেন। হোলিকা একটি বিশেষ শাড়ি পরেছিলেন যা তাকে আগুন থেকে রক্ষা করতে পারতো। প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে হোলিকা আগুনে প্রবেশ করেন, কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে প্রহ্লাদ বেঁচে যান এবং হোলিকা আগুনে পুড়ে মারা যান। এই ঘটনার স্মরণে হোলি উদযাপন করা হয় এবং আগুন জ্বালিয়ে হোলিকা দাহন উৎসব পালন করা হয়।

এই কাহিনি মন্দের বিরুদ্ধে শুভের জয়ের প্রতীক হিসেবে হোলির তাৎপর্যকে প্রতিষ্ঠিত করে।
২. বসন্তের আগমন ও কৃষি উদযাপন:
হোলি মূলত বসন্তের আগমন উদযাপন করে এবং এটি কৃষিজীবী সমাজের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বসন্তে শস্যের পরিপূর্ণতা ঘটে, এবং কৃষকরা নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দে হোলি উৎসব পালন করে। বসন্তের উষ্ণ আবহাওয়া, ফুলের সুগন্ধ, এবং চারপাশের সবুজ শোভা হোলির আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

এই উৎসব বসন্তের সৌন্দর্য এবং উর্বরতার প্রতীক, যা নতুন জীবন এবং সমৃদ্ধির সূচনা করে।
৩. রঙের উৎসব ও ভগবান কৃষ্ণের কাহিনি:
হোলি রঙের উৎসব হিসেবে পরিচিত, এবং এর সঙ্গে ভগবান কৃষ্ণের একটি কাহিনি জড়িত। কথিত আছে, কৃষ্ণ তার গোপীদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে পছন্দ করতেন এবং একদিন তিনি তার প্রিয় রাধার মুখে রঙ লাগিয়ে দেন। সেই থেকেই রঙের খেলার প্রচলন শুরু হয়, যা হোলির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।

হোলিতে সবাই একে অপরকে রঙ মেখে এক ধরণের আনন্দ প্রকাশ করে, যা কৃষ্ণের লীলার স্মরণে উদযাপিত হয়।
৪. সামাজিক ঐক্য ও ভেদাভেদ দূর করার প্রতীক:
হোলি উৎসব সকল ভেদাভেদ দূর করে সামাজিক ঐক্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। হোলির দিন জাত, ধর্ম, শ্রেণি ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে রঙ খেলায় মেতে ওঠে। সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষ একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে এবং নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

এই উৎসবের মাধ্যমে সমাজের ভেতরের বিভিন্ন দূরত্ব এবং বিভাজন দূর করা হয় এবং মানুষকে এক করার একটি প্রচেষ্টা চালানো হয়।
৫. মন্দের বিরুদ্ধে শুভের জয়:
হোলি উৎসবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য হলো মন্দের বিরুদ্ধে শুভের জয়। হোলিকা দাহন এবং প্রহ্লাদের কাহিনি থেকেই বোঝা যায় যে, ঈশ্বর সবসময় মন্দের বিরুদ্ধে দাঁড়ান এবং শুভ শক্তির সুরক্ষা করেন। এই মেসেজ হোলি উৎসবের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে, যেখানে মানুষ বিশ্বাস করে যে, মন্দ শক্তি যতই প্রবল হোক, তা শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবে।

৬. উদ্দীপনা ও মেলার উৎসব:
হোলির সময় গ্রাম-শহরে নানা মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই সময় মানুষ গান, নাচ, এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ করে। হোলির সময় “ভাং”, “ঠাণ্ডাই” এবং বিভিন্ন মিষ্টি খাবার জনপ্রিয়।

মেলাগুলোতে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে আনন্দ এবং উদ্দীপনা বিরাজ করে, যা এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ।
৭. মিলনের প্রতীক:
হোলি হলো বন্ধু এবং পরিবারের মিলন উৎসব। হোলির দিন সবাই পুরোনো দ্বন্দ্ব ভুলে নতুনভাবে সম্পর্ক তৈরি করে। শুভেচ্ছা বিনিময় এবং রঙ খেলার মাধ্যমে মানুষ নতুনভাবে সম্পর্ককে শক্তিশালী করে।

হোলি সমাজের মধ্যে সম্প্রীতি এবং ভালোবাসা প্রচার করে, যা সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তোলে।
৮. পরিবেশ এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ:
হোলি প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে মানুষের নিবিড় সংযোগ স্থাপন করে। বসন্তের আগমনে যখন চারদিকে ফুল ফোটে এবং গাছপালা নতুন জীবনে সেজে ওঠে, তখন প্রকৃতির এই পরিবর্তনের সঙ্গে হোলির রঙিন উৎসব একাত্ম হয়ে যায়। মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে এবং তার সঙ্গে মিশে যায়।

সারসংক্ষেপ:
ভারতের হোলি উৎসব কেবল একটি রঙের খেলা নয়, এটি সামাজিক ঐক্য, মানবিক সম্পর্ক, শুভ শক্তির বিজয়, এবং বসন্তের আগমনের উদযাপন। এর সঙ্গে জড়িত পৌরাণিক কাহিনি, রঙের খেলা, এবং মেলামেশার মাধ্যমে হোলি মানুষকে এক করে এবং তাদের জীবনকে আনন্দময় করে তোলে।

আরিফুর রহমান প্রকাশের স্থিতি পরিবর্তিত করেছেন 6 দিন পূর্বে

বিভাগসমূহ