বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস কী?

43 বার দেখাইতিহাসইতিহাস বাংলাদেশ স্বাধীনতা
0

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস কী?

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024
0

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস হলো একটি দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়া, যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কারণের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের জনগণ বছরের পর বছর সংগ্রাম করে এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তারা স্বাধীনতা অর্জন করে। নিচে স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং পাকিস্তানের জন্ম (১৯৪৭):
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়—ভারত ও পাকিস্তান। পূর্ব বাংলাকে (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের অংশ করা হয় এবং এটি পরিচিত হয় পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে।
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ভাষা, সংস্কৃতি, এবং রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে অবহেলিত বোধ করত, কারণ পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানকে শাসন করত।
২. ভাষা আন্দোলন (১৯৫২):
পাকিস্তান সরকার যখন উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দেয়, তখন পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়। বাংলা ভাষার প্রতি মানুষের আবেগ ও ভালোবাসা থেকেই ভাষা আন্দোলন শুরু হয়, যার চূড়ান্ত ঘটনা ঘটে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, যেদিন পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন ছাত্র শহীদ হন।
এই আন্দোলন থেকেই বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় আরও জোরালো হয়।
৩. রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ছয় দফা (১৯৬৬):
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন, যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করে।
৪. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা (১৯৬৮):
শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে এবং তারা শেখ মুজিবকে তাদের নেতা হিসেবে আরও সমর্থন করতে শুরু করে।
৫. ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া:
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে ১৬৭টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে অসম্মতি জানায়, যার ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন আরও জোরালো হয়।
৬. অপারেশন সার্চলাইট এবং মুক্তিযুদ্ধের সূচনা (২৫ মার্চ ১৯৭১):
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় গণহত্যা চালায়, যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। এই নৃশংস হামলার পর শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
৭. মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১):
১৯৭১ সালের ৯ মাসব্যাপী এই মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষ, ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মী এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা পান।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা এবং পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তি লাভ করা।
৮. বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১):
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে এবং বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
এই দিনটি বাংলাদেশের বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়।
উপসংহার:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম একটি দীর্ঘ এবং ত্যাগপূর্ণ অধ্যায়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ শোষণ, বৈষম্য, এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের চূড়ান্ত অধ্যায়, যা একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ নিশ্চিত করেছে।

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024
আপনি 1 উত্তরের মধ্যে 1টি দেখছেন, সব উত্তর দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বিভাগসমূহ