রকেট কীভাবে মহাকাশে যায়?

127 বার দেখাবিজ্ঞানমহাকাশ রকেট
0

রকেট কীভাবে মহাকাশে যায়?

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024
0

রকেট মহাকাশে যেতে পারে মূলত নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্র (Newton’s Third Law of Motion) এর উপর ভিত্তি করে, যা বলে “প্রত্যেক ক্রিয়ার বিপরীতে সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে”। রকেট যখন জ্বালানি পুড়িয়ে গ্যাস বা পদার্থকে নিচের দিকে বের করে দেয়, তখন এর বিপরীতে রকেটের ওপর একটি সমান ও বিপরীত শক্তি প্রয়োগ হয়, যা রকেটকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় রকেট পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে অতিক্রম করে মহাকাশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

নিচে রকেট মহাকাশে যাওয়ার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ ও বিস্তারিত বিবরণ আলোচনা করা হলো:

রকেট মহাকাশে যাওয়ার ধাপসমূহ:

১. রকেটের জ্বালানি এবং থ্রাস্ট (Thrust) তৈরি:
জ্বালানি পুড়ানো: রকেটের মধ্যে থাকা জ্বালানি (জ্বালানির দুটি প্রধান ধরন রয়েছে: তরল জ্বালানি এবং কঠিন জ্বালানি) যখন পুড়ে, তখন প্রচুর গরম গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাস উচ্চ গতিতে রকেটের নীচের দিকে নির্গত হয়।
থ্রাস্ট বা চাপ: এই গ্যাস নির্গত হওয়ার সময় রকেটের নিচের দিকে একটি শক্তি বা থ্রাস্ট তৈরি হয়, যা রকেটকে উল্টো দিকে ঠেলে দেয় এবং উপরের দিকে উঠতে সাহায্য করে। এটি নিউটনের তৃতীয় সূত্রের একটি উদাহরণ।
২. পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করা:
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি: রকেটকে মহাকাশে যেতে হলে প্রথমে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করতে হয়। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি রকেটকে টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করে, তাই রকেটকে খুব দ্রুত গতি অর্জন করতে হয়।
Escape Velocity (মুক্তির গতি): পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ অতিক্রম করার জন্য রকেটের একটি নির্দিষ্ট গতির প্রয়োজন হয়, যাকে বলা হয় মুক্তির গতি (Escape Velocity)। পৃথিবীর জন্য এই মুক্তির গতি প্রায় ১১.২ কিমি/সেকেন্ড। অর্থাৎ, রকেটকে এই গতিতে চলতে হবে যাতে এটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল থেকে বের হয়ে মহাকাশে যেতে পারে।
৩. বায়ুমণ্ডল অতিক্রম করা:
বায়ুমণ্ডলীয় প্রতিরোধ (Atmospheric Drag): রকেট যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে উপরে উঠতে থাকে, তখন বায়ুর প্রতিরোধ তার গতিকে কমানোর চেষ্টা করে। এজন্য রকেটকে প্রচুর শক্তি প্রয়োজন হয় বায়ুমণ্ডল অতিক্রম করার জন্য।
স্টেজিং (Staging): অধিকাংশ রকেটেই একাধিক ধাপ (stage) থাকে। প্রতিটি ধাপে আলাদা জ্বালানি ট্যাঙ্ক থাকে, যা নির্দিষ্ট পর্যায়ে ব্যবহারের পর রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি রকেটকে হালকা করে এবং দ্রুতগতিতে মহাকাশের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।
৪. মহাকাশে প্রবেশ করা:
নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে: বায়ুমণ্ডল অতিক্রম করার পর, রকেট পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব থেকে অনেকটা মুক্ত হয়ে যায় এবং এটি মহাকাশের শূন্য মাধ্যাকর্ষণ অঞ্চলে প্রবেশ করে। তখন রকেট তার গন্তব্যের দিকে এগোতে থাকে।
মহাকাশে রকেটের চলাচল: মহাকাশে পৌঁছানোর পর রকেটের গতি নির্ধারিত পথে পরিচালিত হয়। রকেটের ইঞ্জিন তখন বন্ধ থাকে বা প্রয়োজন অনুযায়ী পুনরায় চালু হয়, যাতে রকেট নির্ধারিত গতিতে মহাকাশের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।
রকেটের কাজের মূল সূত্র:

রকেটের মহাকাশে যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়া নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি। রকেট যখন নিচের দিকে গ্যাস নির্গত করে, তখন এর বিপরীত দিকে সমান এবং বিপরীত একটি প্রতিক্রিয়া শক্তি তৈরি হয়, যা রকেটকে উপরে ঠেলে দেয়। এই প্রতিক্রিয়াই রকেটকে মহাকাশে পাঠায়।

রকেটের বিভিন্ন অংশ ও কাজ:

জ্বালানি ট্যাঙ্ক: রকেটের মূল অংশগুলির মধ্যে একটি হলো জ্বালানি ট্যাঙ্ক, যা রকেটের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এটি কঠিন বা তরল জ্বালানি হতে পারে।
ইঞ্জিন: রকেটের ইঞ্জিন হলো সেই অংশ, যা জ্বালানিকে জ্বলতে সাহায্য করে এবং নির্গত গ্যাসের মাধ্যমে রকেটকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়।
পেলোড (Payload): রকেটের উপরের অংশে থাকে পেলোড, যা মহাকাশে পাঠানো স্যাটেলাইট, মহাকাশযান, বা কোনো বৈজ্ঞানিক যন্ত্র হতে পারে।
স্টেজিং: রকেট সাধারণত একাধিক ধাপে বিভক্ত থাকে। এক একটি ধাপ নির্দিষ্ট উচ্চতা বা গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ব্যবহার করা জ্বালানিসহ আলাদা হয়ে যায়, যা রকেটের ওজন কমিয়ে দেয় এবং রকেটকে আরও উপরে উঠতে সাহায্য করে।
রকেটের সফল উৎক্ষেপণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান:

যথেষ্ট থ্রাস্ট: পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করার জন্য রকেটের ইঞ্জিন থেকে যথেষ্ট পরিমাণে থ্রাস্ট বা চাপ সৃষ্টি করতে হয়।
ঠিকমতো স্টেজিং: স্টেজিং প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে কাজ করলে রকেটের ওজন কমে যায় এবং এটি দ্রুত গতিতে মহাকাশের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
নির্ভুল পথ: রকেটকে তার গন্তব্যে সঠিকভাবে পৌঁছাতে হলে সঠিক পথ নির্দেশনা প্রয়োজন। এজন্য সঠিক নেভিগেশন সিস্টেম এবং ম্যানুভারিং প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়।
উপসংহার:
রকেট মহাকাশে যাওয়ার পেছনে মূলত নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্র এবং রকেটের থ্রাস্ট তৈরি প্রক্রিয়া কাজ করে। রকেটের ইঞ্জিন থেকে জ্বালানি পুড়িয়ে তৈরি হওয়া গ্যাস নিচের দিকে নির্গত হয়, যা রকেটকে উল্টো দিকে ঠেলে দেয় এবং এটি মহাকাশের দিকে অগ্রসর হয়। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করে এবং বায়ুমণ্ডল পার করে রকেট মহাকাশে প্রবেশ করে এবং নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে।

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024

বিভাগসমূহ