কেন পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে?
পৃথিবী কেন সূর্যের চারপাশে ঘোরে তা বোঝার জন্য আমাদের প্রথমে সৌরজগতের গঠন এবং নীটনীয় পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক নীতিগুলি জানা প্রয়োজন। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. গ্র্যাভিটেশন (Gravity)
গ্র্যাভিটেশনের প্রভাব: গ্র্যাভিটেশন হল একটি মৌলিক প্রাকৃতিক বল যা দুটি ভরযুক্ত বস্তুকে একে অপরের দিকে আকর্ষণ করে। সূর্যের বিশাল ভর পৃথিবীকে একটি শক্তিশালী গ্র্যাভিটেশনাল বল দিয়ে আকর্ষণ করে।
ব্যালেন্স: পৃথিবীর গতির কারণে এটি সরাসরি সূর্যের দিকে নড়াচড়া করতে না পারা অবস্থায় গ্র্যাভিটেশন এবং পৃথিবীর গতির মধ্যে একটি ব্যালেন্স তৈরি হয়, যা আমাদেরকে সূর্যের চারপাশে স্থায়ীভাবে কক্ষপথে রাখে।
২. ইনর্শিয়া (Inertia)
ইনর্শিয়ার নীতি: নিউটনের প্রথম আইন অনুযায়ী, একটি বস্তু নিরবিচ্ছিন্ন গতিতে চলছে যদি এর উপর কোন বাহ্যিক বল প্রয়োগ না হয়। পৃথিবী যখন কক্ষপথে চলছে, তখন এর গতির কারণে এটি সরাসরি এক স্থানে থাকার চেষ্টা করে।
গ্র্যাভিটেশনাল টান: সূর্যের গ্র্যাভিটেশনাল টান পৃথিবীকে একটি বাঁকে রাখতে সাহায্য করে, ফলে পৃথিবী সরাসরি সূর্যের দিকে পড়ে না এবং স্থায়ীভাবে কক্ষপথে থাকে।
৩. নিউটনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় আইন
নিউটনের দ্বিতীয় আইন: নিউটনের দ্বিতীয় নীতি বল দেয় যে, একটি বস্তুর ত্বরণ তার উপর প্রয়োগ করা মোট বলের অনুপাতিক। পৃথিবীর কক্ষপথে চলাচলের জন্য সূর্যের গ্র্যাভিটেশনাল টান এবং পৃথিবীর গতির মধ্যে সমতা বজায় রাখে।
নিউটনের তৃতীয় আইন: প্রতি ক্রিয়া একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সূর্য পৃথিবীর প্রতি আকর্ষণমূলক বল প্রয়োগ করে, এবং পৃথিবী সূর্যের প্রতি সমান এবং বিপরীত আকর্ষণমূলক বল প্রয়োগ করে।
৪. কক্ষপথের আকার
এলিপটিক্যাল কক্ষপথ: হাওয়েল নিউটন দেখিয়েছিলেন যে, গ্রহেরা সূর্যের চারপাশে একটি এলিপসাকৃতি কক্ষপথে চলছে। এই কক্ষপথের আকৃতি গ্রহের গতির পরিবর্তন এবং সূর্যের গ্র্যাভিটেশনাল টানের সমন্বয়ে তৈরি হয়।
ব্যালেন্সড শক্তি: পৃথিবীর গতির কেন্দ্রীয় দিকের টান এবং কক্ষপথের বাহ্যিক দিকে যাওয়ার টানের সমন্বয়ই আমাদের কক্ষপথকে স্থিতিশীল রাখে।
৫. সৌরজগতের গঠন এবং বিবর্তন
নবীন গ্রহাণুর গঠন: সৌরজগত গঠনের সময়, একটি বৃহৎ গ্যাস এবং ধূলিকণার মেঘ ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে একটি ডিস্ক আকৃতির গঠন করে। সূর্য এই ডিস্কের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হয় এবং গ্রহাণুগুলি এই ডিস্কের মধ্য দিয়ে কক্ষপথে চলে।
মোমেন্টাম: গঠনকালীন সময়ে গ্রহাণুগুলির মোমেন্টাম সূর্যের চারপাশে চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় গতিশক্তি সরবরাহ করে।
৬. অবস্থিতির সমন্বয়
স্ট্যাবিলিটি: পৃথিবীর কক্ষপথে স্থায়ীত্ব বজায় রাখার জন্য সূর্যের আকর্ষণ এবং পৃথিবীর গতির মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সমন্বয় ছাড়া, পৃথিবী বা সূর্য বা অন্য গ্রহেরা স্থিতিশীল কক্ষপথে চলতে পারবে না।
উপসংহার
পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরার মূল কারণ হলো গ্র্যাভিটেশন এবং ইনর্শিয়া এর মধ্যে একটি সুষম সম্পর্ক। সূর্যের বৃহৎ ভর পৃথিবীকে আকর্ষণ করে এবং পৃথিবীর গতির কারণে সরাসরি সূর্যের দিকে না পড়ে একটি স্থিতিশীল কক্ষপথে থাকার সুযোগ দেয়। নিউটনের পদার্থবিজ্ঞানের নীতিগুলি এই প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা করতে সহায়ক। এছাড়াও, সৌরজগতের গঠন ও বিবর্তনকালীন ঘটনাগুলি এই গতিশীল সম্পর্ককে আরও সুস্পষ্টভাবে বোঝায়। ফলে, পৃথিবী আমাদের সৌরজগতের একটি স্থায়ী ও সুস্থিত সদস্য হিসেবে সূর্যের চারপাশে ঘোরতে থাকে।