পলাশীর যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসে কী প্রভাব ফেলেছে?

97 বার দেখাইতিহাসবাংলা
0

পলাশীর যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসে কী প্রভাব ফেলেছে?

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024
0

২৩ জুন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ (Battle of Plassey) বাংলা, বিহার ও ওড়িশার নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন এবং এর ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

প্রভাবসমূহ

১. ব্রিটিশ শাসনের সূচনা
রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল: পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে। এটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা ঘটায়, যা পরবর্তীতে সমগ্র ভারতবর্ষে প্রসারিত হয়।
২. অর্থনৈতিক শোষণ ও সম্পদ পাচার
সম্পদের বহিঃপ্রবাহ: ব্রিটিশরা বাংলার সম্পদ, বিশেষ করে সোনা, রূপা, এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার করতে শুরু করে।
শিল্পের ধ্বংস: বাংলার সুপ্রসিদ্ধ বস্ত্র ও হস্তশিল্প ধ্বংস করা হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে।
৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
সামাজিক পরিবর্তন: ব্রিটিশ শাসনের কারণে বাংলার সমাজে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। প্রথাগত সমাজব্যবস্থা ও মূল্যবোধে প্রভাব পড়ে।
শিক্ষা ও ভাষা: ব্রিটিশরা ইংরেজি শিক্ষা ও ভাষার প্রচলন করে, যা বাংলার শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে।
৪. প্রশাসনিক ও আইনব্যবস্থার পরিবর্তন
নতুন আইন ও শাসনব্যবস্থা: ব্রিটিশরা তাদের নিজস্ব আইন ও প্রশাসনিক পদ্ধতি প্রবর্তন করে, যা স্থানীয় আইন ও প্রথাকে প্রভাবিত করে।
জমিদারি প্রথা: ১৭৯৩ সালে স্থায়ী বন্দোবস্ত (Permanent Settlement) প্রবর্তন করা হয়, যা জমিদারি প্রথাকে স্থায়ী করে এবং কৃষকদের উপর করের চাপ বৃদ্ধি করে।
৫. কৃষি ও খাদ্য সংকট
কৃষি উৎপাদনে পতন: ব্রিটিশদের কর নীতির কারণে কৃষকরা দারিদ্র্যসীমায় পৌঁছে যায়। এটি খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
দুর্ভিক্ষ: ১৭৭০ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে, যা ব্রিটিশদের শোষণমূলক নীতির ফল।
৬. প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের সূচনা
অসন্তোষের বৃদ্ধি: ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়।
বিদ্রোহ ও আন্দোলন: সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ এবং পরবর্তীতে সিপাহী বিদ্রোহের মতো আন্দোলন শুরু হয়।
৭. বাণিজ্যিক আধিপত্য
বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার বাণিজ্যের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে।
কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি: ব্রিটিশ কোম্পানির মুনাফা বেড়ে যায়, যা ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবকে সহায়তা করে।
৮. বাংলার পতন
স্বাধীনতার হারানো: পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলা তার স্বাধীনতা হারায় এবং একটি ঔপনিবেশিক প্রদেশে পরিণত হয়।
নবাবী শাসনের অবসান: নবাবী শাসনব্যবস্থা কার্যত শেষ হয়ে যায় এবং ব্রিটিশরা সরাসরি শাসন শুরু করে।
৯. সামরিক শক্তির পরিবর্তন
স্থানীয় সেনাবাহিনীর দুর্বলতা: পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় বাংলার সামরিক শক্তির দুর্বলতা প্রকাশ করে।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর আধুনিকতা: ব্রিটিশরা আধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধকৌশল ব্যবহার করে, যা স্থানীয় শাসকদের থেকে তাদেরকে এগিয়ে রাখে।
১০. রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা
মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা: নবাবের সেনাপতি মীর জাফর ব্রিটিশদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে, যা নবাবের পরাজয়ের প্রধান কারণ।
রাজনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতার উদাহরণ: এই ঘটনা বাংলার রাজনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতার একটি উদাহরণ হয়ে থাকে।
উপসংহার

পলাশীর যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসে একটি মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা দখল বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। ব্রিটিশ শাসনের শুরু বাংলার স্বাধীনতার অবসান ঘটায় এবং শোষণ ও অত্যাচারের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। পলাশীর যুদ্ধ তাই বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়।

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024

বিভাগসমূহ