বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি কী?

30 বার দেখাইতিহাসবাংলাদেশ
0

বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি কী?

মুহাম্মদ ইকবাল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024
0

বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। এই সংবিধানে রাষ্ট্রের পরিচালনার জন্য চারটি মৌলিক নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রের আদর্শ ও লক্ষ্যকে নির্দেশ করে। এই মূলনীতিগুলি হলো:

জাতীয়তাবাদ
গণতন্ত্র
সমাজতন্ত্র
ধর্মনিরপেক্ষতা
১. জাতীয়তাবাদ
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ:
সংবিধানে ‘জাতীয়তাবাদ’ বলতে দেশের সকল নাগরিকের মধ্যে একতা, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের ধারণাকে বোঝানো হয়েছে।
ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয় গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
উদ্দেশ্য:
সকল নাগরিককে একটি জাতীয় সত্তায় আবদ্ধ করা।
আঞ্চলিকতা, ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত বিভেদের উর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা।
২. গণতন্ত্র
জনগণের ক্ষমতা:
রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস হলো জনগণ।
জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয়।
মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা:
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি নিশ্চিত করা হয়েছে।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান:
স্বাধীন বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষিত করা।
৩. সমাজতন্ত্র
অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার:
সমাজতন্ত্র বলতে অর্থনৈতিক সমতা, সামাজিক ন্যায় ও সকলের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা বোঝায়।
দারিদ্র্য বিমোচন:
দারিদ্র্য, শোষণ ও বৈষম্য দূর করে সকল নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ।
সম্পদের সুষম বণ্টন:
জাতীয় সম্পদ ও আয়ের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র:
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও সামাজিক সুরক্ষার মতো মৌলিক সেবাসমূহ প্রদান।
৪. ধর্মনিরপেক্ষতা
সকল ধর্মের প্রতি সম্মান:
রাষ্ট্র কোন বিশেষ ধর্মকে সমর্থন বা বিরোধিতা করবে না।
সকল ধর্মের প্রতি সমান সম্মান ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা হবে।
ধর্মীয় স্বাধীনতা:
প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে।
কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর ধর্মীয় বিশ্বাস আরোপ করা যাবে না।
ধর্মীয় বৈষম্য নিষিদ্ধ:
ধর্মের নামে কোন প্রকার বৈষম্য, শোষণ বা অত্যাচার গ্রহণযোগ্য নয়।
সংবিধানের সংশোধনী ও পরিবর্তন
পঞ্চম সংশোধনী (১৯৭৯):
সংবিধানের মূলনীতিগুলিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়, যেমন ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিবর্তে ‘আল্লাহ্‌র প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা’ যুক্ত করা হয়।
অষ্টম সংশোধনী (১৯৮৮):
ইসলামীকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনী (২০১১):
সংবিধানে পুনরায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র ধারণা সংযোজিত হয়।
মূলনীতিগুলিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রের আদর্শ স্পষ্ট করা হয়।
উপসংহার
বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—রাষ্ট্রের পরিচালনার মৌলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এই মূলনীতিগুলি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে সমতা, ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সংবিধানের এই আদর্শগুলি দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ঐক্য, শান্তি ও প্রগতি নিশ্চিত করতে অবদান রাখে।

নোট: সংবিধানের মূলনীতিগুলি দেশের আইনি কাঠামো ও প্রশাসনিক নীতিমালার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এসব নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ একটি সুশাসিত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করতে সক্ষম হবে।

মুহাম্মদ ইকবাল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024

বিভাগসমূহ