চণ্ডীদাসের কবিতায় মধ্যযুগের বাংলার ভাষার বৈশিষ্ট্য কী?

94 বার দেখাভাষাকবিতা চণ্ডীদাস
0

চণ্ডীদাসের কবিতায় মধ্যযুগের বাংলার ভাষার বৈশিষ্ট্য কী?

মুহাম্মদ ইকবাল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024
0

চণ্ডীদাসের কবিতায় মধ্যযুগের বাংলার ভাষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, যা বাংলা ভাষার ইতিহাস ও সাহিত্যিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

১. প্রাক-মধ্য বাংলা ভাষার ব্যবহার:
চণ্ডীদাসের কবিতা প্রাক-মধ্য বাংলা ভাষায় রচিত, যা আধুনিক বাংলা ভাষার পূর্ববর্তী পর্যায়। এতে প্রাচীন ভাষাগত রীতিনীতি ও শব্দরূপ পাওয়া যায়।

২. তদ্ভব ও দেশজ শব্দের প্রাধান্য:
তাঁর কবিতায় তৎসম শব্দের তুলনায় তদ্ভব ও দেশজ শব্দের ব্যবহার বেশি। এটি ভাষাকে সহজবোধ্য ও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছে।

৩. ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য:
ক্রিয়া পদের রূপান্তর: ক্রিয়াপদের পুরনো রূপ যেমন করয়, বলয় ইত্যাদি ব্যবহার হয়েছে।
বহুবচন ও বিশেষণ: বিশেষ্য ও বিশেষণের প্রাচীন বহুবচন রূপ ব্যবহৃত হয়েছে।
৪. ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্য:
অনুস্বার ও নাসিক্য ধ্বনি: শব্দের উচ্চারণে অনুস্বার ও নাসিক্য ধ্বনির প্রচলন দেখা যায়।
ধ্বনির অপপ্রয়োগ: কিছু ক্ষেত্রে ধ্বনির লোপ বা সংক্ষেপণ ঘটে, যেমন করিয়া এর পরিবর্তে করিয়া।
৫. আঞ্চলিক উপভাষার প্রভাব:
চণ্ডীদাসের কবিতায় স্থানীয় উপভাষা ও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়, যা তাঁর কবিতাকে বাস্তব ও জীবন্ত করে তোলে।

৬. ভাবপ্রকাশের সরলতা:
তাঁর ভাষা সহজ, সরল ও আবেগময়। প্রেম, ভক্তি ও মানবিক অনুভূতি প্রকাশে তিনি সাধারণ ভাষার আশ্রয় নিয়েছেন।

৭. উপমা ও রূপকের ব্যবহার:
লোকজ উপমা, রূপক ও প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষাকে সমৃদ্ধ ও সৌন্দর্যময় করেছেন।

৮. বৈষ্ণব প্রভাব:
চণ্ডীদাস বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবিত ছিলেন, যা তাঁর ভাষায় ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শব্দের ব্যবহারে প্রকাশ পায়।

৯. ছন্দ ও অলঙ্কার:
স্থানীয় ছন্দের ব্যবহার: তিনি পদাবলীতে স্থানীয় ছন্দ ও মাত্রার ব্যবহার করেছেন।
অলঙ্কারিক ভাষা: উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও অন্যান্য অলঙ্কার ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছেন।
সারসংক্ষেপে, চণ্ডীদাসের কবিতায় মধ্যযুগের বাংলা ভাষার একটি স্বতন্ত্র ও সমৃদ্ধ রূপ পরিলক্ষিত হয়, যা বাংলা সাহিত্য ও ভাষার বিকাশে অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছে।

মুহাম্মদ ইকবাল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 10, 2024

বিভাগসমূহ