দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান কী?

47 বার দেখারাজনীতিদক্ষিণ এশিয়া বাংলাদেশ
0

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান কী?

আব্দুল আজিজ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 11, 2024
0

দক্ষিণ এশিয়া একটি ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, যেখানে বাংলাদেশ একটি কেন্দ্রীয় অবস্থান দখল করে আছে। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও চীনের সাথে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সংযুক্ত। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান তার অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও কূটনীতিতে বহুমুখী প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানের প্রধান দিকসমূহ
১. ভৌগোলিক অবস্থান ও সংযোগ

কেন্দ্রীয় অবস্থান:
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগে সহায়ক।
বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকা আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেশী দেশসমূহ:
ভারত: বাংলাদেশ তিন দিক থেকে ভারতের সাথে সীমান্ত ভাগ করে, যা প্রায় ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ।
মিয়ানমার: দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত রয়েছে, যা ২৭১ কিলোমিটার।
চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে সংযোগ: মিয়ানমারের মাধ্যমে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপন সম্ভব।
২. আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সংগঠনসমূহে অংশগ্রহণ

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক):
বাংলাদেশ সার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে কাজ করে।
সার্কের সচিবালয় কাঠমান্ডুতে অবস্থিত, তবে বাংলাদেশ এর কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় উদ্যোগ (বিমসটেক):
বিমসটেক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।
বিমসটেকের সচিবালয় ঢাকায় অবস্থিত, যা বাংলাদেশের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।
আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহে সদস্যপদ:
কমনওয়েলথ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), জাতিসংঘ প্রভৃতিতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে।
৩. ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক

কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক:
ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর।
বাণিজ্য, নিরাপত্তা, জলবণ্টন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও চ্যালেঞ্জ উভয়ই বিদ্যমান।
সীমান্ত সমস্যা ও সমাধান:
ছিটমহল বিনিময় ও সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে।
তিস্তা নদীর জলবণ্টন চুক্তি এখনো আলোচনার বিষয়।
৪. চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক

অর্থনৈতিক সহযোগিতা:
চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর আওতায় চীনের সাথে সংযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সামরিক সহযোগিতা:
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চীনের সাথে বাংলাদেশের সহযোগিতা রয়েছে, যা ভারসাম্য রক্ষার কৌশল হিসেবে বিবেচিত।
৫. মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা সংকট

রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা:
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এই সংকট দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা:
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে।
৬. আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রম

সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা:
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও যৌথ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
৭. অর্থনৈতিক করিডোর ও সংযোগ বৃদ্ধি

বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন:
এশীয় মহাসড়ক ও ট্রান্স-এশিয়া রেলওয়ের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনে কাজ করছে।
বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (BCIM) অর্থনৈতিক করিডোরের প্রস্তাব রয়েছে।
বন্দর ও জ্বালানি প্রকল্প:
মাতারবাড়ি ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব।
৮. কৌশলগত ভারসাম্য ও পররাষ্ট্রনীতি

সর্বদলীয় বন্ধুত্ব নীতি:
বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতিতে ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ এই নীতি অনুসরণ করে।
ভারসাম্য রক্ষা:
ভারত ও চীনের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা।
৯. জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব:
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আঞ্চলিক সহযোগিতা:
জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সংরক্ষণে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো।
উপসংহার
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত। ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারতের সাথে ঐতিহাসিক ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, চীনের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয় অংশগ্রহণ বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করছে। ভবিষ্যতে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সমৃদ্ধি ও স্থায়িত্বে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

আব্দুল আজিজ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 11, 2024

বিভাগসমূহ