ভারতের নতুন কৃষি আইন নিয়ে বিতর্ক কী?

25 বার দেখারাজনীতিআইন কৃষি ভারত
0

ভারতের নতুন কৃষি আইন নিয়ে বিতর্ক কী?

আব্দুল আজিজ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে
0

২০২০ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিনটি নতুন কৃষি আইন প্রণয়ন করে, যা দেশের কৃষি খাতে বড় ধরনের সংস্কার আনার লক্ষ্যে গৃহীত হয়। এই আইনগুলি ছিল:

কৃষক উৎপাদন বাণিজ্য ও বাণিজ্য (প্রচার ও সুবিধা) আইন, ২০২০
কৃষক (সক্ষমতা ও সুরক্ষা) মূল্য আশ্বাস এবং কৃষি পরিষেবা চুক্তি আইন, ২০২০
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য (সংশোধন) আইন, ২০২০
তবে এই আইনগুলি প্রচলনের পর থেকেই সারা দেশে, বিশেষ করে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিরোধ দেখা দেয়।

নতুন কৃষি আইনগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য
১. কৃষক উৎপাদন বাণিজ্য ও বাণিজ্য (প্রচার ও সুবিধা) আইন, ২০২০

এপিএমসি মন্ডির বাইরে বাণিজ্য: এই আইন অনুযায়ী, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল এপিএমসি (কৃষি উৎপাদন বিপণন কমিটি) মন্ডির বাইরে সরাসরি বেসরকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন।
আন্তঃরাজ্য ও আন্তঃরাজ্য বাণিজ্য: কৃষকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো যেকোনো স্থানে ফসল বিক্রি করতে পারবেন।
২. কৃষক (সক্ষমতা ও সুরক্ষা) মূল্য আশ্বাস এবং কৃষি পরিষেবা চুক্তি আইন, ২০২০

কন্ট্রাক্ট ফার্মিং: এই আইনের মাধ্যমে কৃষকরা বেসরকারি কোম্পানি বা ব্যবসায়ীদের সাথে আগাম চুক্তির ভিত্তিতে ফসল উৎপাদন করতে পারবেন।
দাম ও পরিষেবা নিশ্চিতকরণ: চুক্তিতে ফসলের দাম ও অন্যান্য পরিষেবার বিষয়গুলি আগাম নির্ধারিত হবে।
৩. অত্যাবশ্যকীয় পণ্য (সংশোধন) আইন, ২০২০

সংরক্ষণ সীমা বাতিল: খাদ্যশস্য, ডাল, আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সংরক্ষণ সীমা শিথিল করা হয়েছে, যাতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো যায়।
বিতর্কের মূল কারণসমূহ
১. ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) ব্যবস্থার প্রতি অনিশ্চয়তা

MSP ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ: কৃষকরা আশঙ্কা করেন যে নতুন আইনের ফলে সরকারী MSP ব্যবস্থার গুরুত্ব হ্রাস পাবে এবং ধীরে ধীরে তা বাতিল হয়ে যাবে।
দাম নির্ধারণে অনিশ্চয়তা: বেসরকারি ক্রেতারা যদি কম দামে ফসল কিনতে চান, তবে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
২. এপিএমসি মন্ডির ভূমিকা হ্রাস

সরকারী নিয়ন্ত্রণের অভাব: এপিএমসি মন্ডির বাইরে বাণিজ্য করলে সরকারী নিয়ন্ত্রণ কমে যাবে, যা কৃষকদের সুরক্ষায় প্রভাব ফেলতে পারে।
মন্ডির অবকাঠামোর ক্ষতি: মন্ডির মাধ্যমে প্রাপ্ত রাজস্ব কমে গেলে সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে।
৩. কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা

কর্পোরেট শোষণ: বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলি কৃষকদের থেকে কম দামে ফসল কিনে মুনাফা বাড়াতে পারে।
আলোচনায় অসম ক্ষমতার ভারসাম্য: কৃষক ও কর্পোরেটদের মধ্যে চুক্তি করতে গিয়ে কৃষকরা দুর্বল অবস্থানে থাকবেন।
৪. পর্যাপ্ত পরামর্শ ও আলোচনার অভাব

আইন প্রণয়নে তাড়াহুড়ো: কৃষক সংগঠন ও বিরোধী দলগুলির দাবি যে আইনগুলি প্রণয়নের আগে পর্যাপ্ত পরামর্শ ও আলোচনা করা হয়নি।
সংসদে পাসের পদ্ধতি: সংসদে বিলগুলি পাসের সময় বিধিসম্মত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
৫. বিরোধী দল ও কৃষক সংগঠনগুলির আপত্তি

রাজনৈতিক বিরোধিতা: বিরোধী দলগুলি আইনগুলির বিরোধিতা করে এবং কৃষকদের পাশে দাঁড়ায়।
কৃষক সংগঠনগুলির প্রতিবাদ: পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের কৃষকরা দিল্লির সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যান।
আন্দোলন ও প্রতিবাদের চিত্র
দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন: ২০২০ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া এই আন্দোলন মাসের পর মাস ধরে চলে, যেখানে লক্ষাধিক কৃষক অংশগ্রহণ করেন।
দিল্লি চলো অভিযান: কৃষকরা দিল্লির সীমান্তে অবস্থান নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনার দাবি জানায়।
প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্র্যাক্টর র‍্যালি: ২৬ জানুয়ারি ২০২১ সালে কৃষকরা ট্র্যাক্টর র‍্যালি করে, যা কিছু ক্ষেত্রে সহিংস রূপ নেয়।
সরকারের অবস্থান
কৃষি সংস্কার: সরকার দাবি করে যে এই আইনগুলি কৃষি খাতে সংস্কার এনে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাবে।
কৃষকদের বিকল্প ও স্বাধীনতা: কৃষকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ফসল বিক্রি করতে পারবেন এবং অধিকতর লাভবান হবেন।
আলোচনার প্রস্তাব: সরকার কৃষকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেয়।
পরিণতি ও সমাধান
আইন স্থগিতকরণ: সুপ্রিম কোর্ট জানুয়ারি ২০২১ সালে আইনগুলির কার্যকারিতা স্থগিত করে।
আলোচনা ব্যর্থতা: সরকারের সাথে কৃষকদের বেশ কয়েকবার আলোচনা হলেও সমাধান আসেনি।
আইন বাতিল: অবশেষে নভেম্বর ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন যে সরকার তিনটি কৃষি আইন বাতিল করবে।
বাতিলের আনুষ্ঠানিকতা: সংসদে আইনগুলি বাতিলের বিল পাস হয়।
উপসংহার
ভারতের নতুন কৃষি আইনগুলি কৃষি খাতে সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হলেও কৃষকদের মধ্যে আশঙ্কা ও অসন্তোষের সৃষ্টি করে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ব্যবস্থা, এপিএমসি মন্ডির ভবিষ্যৎ, কর্পোরেট শোষণের আশঙ্কা এবং পর্যাপ্ত পরামর্শের অভাবে এই আইনগুলি ব্যাপক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন ও প্রতিবাদের পর সরকার আইনগুলি বাতিল করতে বাধ্য হয়। এই ঘটনা কৃষি খাতে সংস্কার প্রক্রিয়ায় কৃষকদের অংশগ্রহণ ও পরামর্শের গুরুত্বকে সামনে নিয়ে এসেছে।

আব্দুল আজিজ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে
আপনি 1 উত্তরের মধ্যে 1টি দেখছেন, সব উত্তর দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বিভাগসমূহ