হিমালয়ের গঠন ও ভূতাত্ত্বিক গুরুত্ব কী?

20 বার দেখাভূগোলহিমালয়
0

হিমালয়ের গঠন ও ভূতাত্ত্বিক গুরুত্ব কী?

আব্দুল আজিজ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে
0

হিমালয় হল পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি, যা এশিয়ার পাঁচটি দেশ—ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে বিস্তৃত। এই পর্বতশ্রেণি প্রায় ২,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং প্রস্থে ১৫০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। হিমালয় পর্বতমালায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট (৮,৮৪৮ মিটার) সহ মোট ১৪টি শৃঙ্গ রয়েছে, যেগুলির উচ্চতা ৮,০০০ মিটারের বেশি।

হিমালয়ের গঠন
১. টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ

ভারতীয় ও ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষ:
হিমালয়ের গঠন মূলত টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধির ফলে ঘটে। প্রায় ৫ কোটি বছর আগে ভারতীয় প্লেট দক্ষিণে অবস্থিত ছিল এবং উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
এই অগ্রসরমান ভারতীয় প্লেট টেথিস সাগর অতিক্রম করে ইউরেশীয় প্লেটের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
২. টেথিস সাগরের বিলুপ্তি

টেথিস সাগর:
ভারতীয় ও ইউরেশীয় প্লেটের মাঝে টেথিস সাগর অবস্থিত ছিল।
প্লেটের সংঘর্ষের ফলে টেথিস সাগরের তলদেশের পলিমাটি ও শিলাস্তর উপরে উঠে আসে।
৩. পর্বতগঠন প্রক্রিয়া (অরোজেনি)

শিলাস্তরের ভাঁজ ও উত্তোলন:
প্লেটের সংঘর্ষে সৃষ্ট শক্তির কারণে পলিমাটি ও শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে এবং তা উপরে উঠে হিমালয় পর্বতশ্রেণি গঠন করে।
এই প্রক্রিয়াকে অরোজেনি বলা হয়, যা এখনও চলমান।
৪. চলমান টেকটোনিক কার্যকলাপ

সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা:
ভারতীয় প্লেট এখনও উত্তর দিকে ইউরেশীয় প্লেটের নিচে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার প্রতি বছর গতিতে ঢুকে যাচ্ছে।
এর ফলে হিমালয় অঞ্চলে ভূমিকম্প ও টেকটোনিক কার্যকলাপ প্রচলিত।
ভূতাত্ত্বিক গুরুত্ব
১. টেকটোনিক প্লেট তত্ত্বের প্রমাণ

গঠনপ্রণালীর উদাহরণ:
হিমালয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের মাধ্যমে পর্বতগঠনের একটি কার্যকর উদাহরণ।
প্লেট টেকটোনিক্স তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণে হিমালয়ের গঠন বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
২. ভূতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য

শিলাস্তরের বিভিন্নতা:
হিমালয়ে প্রাচীন প্রোটেরোজোয়িক যুগের শিলা থেকে শুরু করে আধুনিক পলিমাটি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের শিলাস্তর পাওয়া যায়।
এটি ভূতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য একটি সমৃদ্ধ ক্ষেত্র।
৩. জীবাশ্ম ও প্রাচীন পরিবেশের তথ্য

জীবাশ্মের উপস্থিতি:
হিমালয়ের শিলাস্তরে সমুদ্রজাত জীবাশ্ম পাওয়া যায়, যা টেথিস সাগরের অস্তিত্বের প্রমাণ।
এই জীবাশ্মগুলি প্রাচীন পরিবেশ ও জীবজগতের বিবর্তন সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
৪. আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব

মৌসুমি বায়ু (মনসুন):
হিমালয় পর্বতশ্রেণি এশিয়ার জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মৌসুমি বায়ুর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে।
হিমালয় দক্ষিণ এশিয়ার সমতলভূমিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।
৫. গ্লেশিয়ার ও পানির উৎস

গ্লেশিয়ার:
হিমালয়ে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম বরফের মজুদ রয়েছে, যা ‘তৃতীয় মেরু’ নামে পরিচিত।
এই গ্লেশিয়ারগুলি এশিয়ার প্রধান নদীগুলির উৎস, যেমন গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, ইয়াংজি, মেকং।
জলসম্পদ:
কোটি কোটি মানুষ এই নদীগুলির উপর নির্ভরশীল, যা সেচ, পানীয় জল ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
৬. পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্র:
হিমালয় অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার জলবায়ু ও উচ্চতার কারণে বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাস।
এটি অনেক বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির আবাসস্থল।
পরিবেশগত সংবেদনশীলতা:
হিমালয় অঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য ভঙ্গুর। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কার্যক্রম এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও গ্লেশিয়ারকে হুমকির মুখে ফেলছে।
৭. ভূপৃষ্ঠের গঠন ও প্রাকৃতিক সম্পদ

খনিজ সম্পদ:
হিমালয়ে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়, যেমন তামা, সীসা, দস্তা।
ভূতাত্ত্বিক গঠনের কারণে এই সম্পদগুলি সঞ্চিত হয়েছে।
ভূমিক্ষয় ও ভূমিধস:
টেকটোনিক কার্যকলাপ ও আবহাওয়াজনিত কারণে ভূমিক্ষয় ও ভূমিধস ঘটে, যা ভৌত ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া বুঝতে সহায়তা করে।
উপসংহার
হিমালয় পর্বতশ্রেণির গঠন টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ ও ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ফল। এর গঠনপ্রণালী ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি টেকটোনিক প্লেট তত্ত্বের প্রমাণ প্রদান করে এবং ভূতত্ত্ববিদদের জন্য গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। হিমালয় অঞ্চলের জলবায়ু, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ এশিয়া মহাদেশের মানুষের জন্য অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। তবে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলের সুরক্ষা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

নোট: হিমালয়ের ভূতাত্ত্বিক গুরুত্ব শুধুমাত্র বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, বরং এশিয়ার অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত। এটি একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, যার সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আমাদের সকলের দায়িত্ব।

আব্দুল আজিজ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে

বিভাগসমূহ