ড. জগদীশ চন্দ্র বসুর উদ্ভিদবিজ্ঞানে গবেষণা কী ছিল?

0

ড. জগদীশ চন্দ্র বসুর উদ্ভিদবিজ্ঞানে গবেষণা কী ছিল?

ফয়সাল কবীর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 6 দিন পূর্বে
0

ড. জগদীশ চন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭) ছিলেন একজন বিখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী, যিনি উদ্ভিদবিজ্ঞানে যুগান্তকারী গবেষণা করে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি উদ্ভিদবিজ্ঞানে প্রথম প্রমাণ করেছিলেন যে, উদ্ভিদেরও অনুভূতি আছে এবং তারা বাইরের প্রভাবের প্রতি সাড়া দেয়। তার উদ্ভাবনী কাজ উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করে এবং বিজ্ঞানজগতে তাকে অমর করে তোলে। তার গবেষণায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে সাদৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে, যা সেই সময়ের বিজ্ঞানী মহলে বিপ্লব ঘটায়।

নিচে ড. জগদীশ চন্দ্র বসুর উদ্ভিদবিজ্ঞানে প্রধান গবেষণাগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. উদ্ভিদের অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া প্রমাণ:
ড. জগদীশ চন্দ্র বসু তার গবেষণায় প্রমাণ করেন যে, উদ্ভিদও প্রাণীদের মতো অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে। তিনি দেখান যে, উদ্ভিদ বাইরের উদ্দীপনায় সাড়া দেয়, যেমন স্পর্শ, তাপ, আলো, এবং বৈদ্যুতিক শক। তিনি প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণ করেন যে উদ্ভিদে একটি স্নায়ুতন্ত্রের মতো প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদেরকে বিভিন্ন উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দিতে সক্ষম করে।

উদাহরণ হিসেবে, তিনি প্রমাণ করেন যে, উদ্ভিদের পাতা বা শাখাগুলো স্পর্শ করলে তারা সংকুচিত হয় বা প্রতিক্রিয়া দেখায়। তিনি দেখিয়েছিলেন যে উদ্ভিদ জীবিত এবং উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দেয়, ঠিক যেমন প্রাণীরা দেয়।
২. ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ এর উদ্ভাবন:
ড. জগদীশ চন্দ্র বসু উদ্ভিদে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিক্রিয়া মাপার জন্য ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ নামক একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে তিনি উদ্ভিদের বৃদ্ধির হার এবং বিভিন্ন প্রভাবের প্রতি উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন।

ক্রেসকোগ্রাফের মাধ্যমে তিনি দেখান যে উদ্ভিদ তাদের পরিবেশের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। উদাহরণস্বরূপ, তাপমাত্রা, আলো এবং আর্দ্রতার পরিবর্তনের প্রতি উদ্ভিদ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, তা তিনি এই যন্ত্রের মাধ্যমে মেপে দেখিয়েছিলেন। এটি উদ্ভিদবিজ্ঞানে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং উদ্ভিদের আচার-আচরণ সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
৩. উদ্ভিদের স্নায়ুতন্ত্র ও সংবেদনশীলতা:
ড. বসু তার গবেষণায় প্রমাণ করেন যে উদ্ভিদে একটি স্নায়ুতন্ত্রের মতো ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের উদ্দীপনার প্রতি দ্রুত সাড়া দিতে সক্ষম করে। তিনি উদ্ভিদের বৈদ্যুতিক সঙ্কেত পাঠানোর ক্ষমতা আবিষ্কার করেন, যা আগে শুধুমাত্র প্রাণীদের ক্ষেত্রে দেখা যেত।

উদ্ভিদের স্নায়ুতন্ত্রের মতো ব্যবস্থা এবং অনুভূতির ধারণা সেই সময়ের বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করে এবং এটি উদ্ভিদবিজ্ঞানে একটি নতুন তত্ত্বের সূচনা করে। উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণা থেকে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল এবং তার এই গবেষণা উদ্ভিদের জীবনযাত্রার ওপর নতুন আলো ফেলে।
৪. উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে সম্পর্ক:
জগদীশ চন্দ্র বসু তার গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মধ্যে সাদৃশ্যের দিকে আলোকপাত করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে, উদ্ভিদেরও প্রাণীর মতো একই ধরণের সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া রয়েছে এবং তাদেরকেও জীব হিসেবে গণ্য করা উচিত। এই ধারণা ছিল সেই সময়ের জন্য একেবারে নতুন এবং বিপ্লবাত্মক।

উদাহরণস্বরূপ, উদ্ভিদের পাতা এবং প্রাণীর মাংসপেশীর সংকোচন প্রক্রিয়ার মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পান। তিনি দেখান যে, উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়া প্রাণীর সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের উদ্ভিদজগত সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
৫. উদ্ভিদের জৈবিক সংকেত এবং রক্ষণাবেক্ষণ:
ড. বসু দেখিয়েছেন যে উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়া কেবল বাহ্যিক উদ্দীপনার ওপর নির্ভর করে না, বরং তাদের অভ্যন্তরীণ জৈবিক সংকেতের ওপরও নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষতিগ্রস্ত বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে উদ্ভিদ নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা চালু করে।

তার গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভিদে থাকা জৈবিক সংকেতের প্রক্রিয়া এবং তা কীভাবে উদ্ভিদের রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
৬. উদ্ভিদবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ভূমিকা:
ড. জগদীশ চন্দ্র বসুর উদ্ভিদবিজ্ঞানে গবেষণা বিজ্ঞানজগতে উদ্ভিদের জীবন সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে পরিবর্তন করে দেয়। তার আবিষ্কার ও গবেষণা কেবল উদ্ভিদবিজ্ঞানেই নয়, অন্যান্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে। তার কাজ উদ্ভিদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দেয় এবং এটি উদ্ভিদবিজ্ঞানের গবেষণায় এক নতুন দিক উন্মোচন করে।

সারসংক্ষেপ:
ড. জগদীশ চন্দ্র বসুর উদ্ভিদবিজ্ঞানে গবেষণা ছিল যুগান্তকারী। তার কাজ উদ্ভিদের স্নায়ুতন্ত্র, সংবেদনশীলতা, এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করে। তার আবিষ্কৃত ক্রেসকোগ্রাফ উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও প্রতিক্রিয়া মাপার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। তার গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভিদের জীবন সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা পাল্টে যায় এবং এটি উদ্ভিদবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করে। তার গবেষণা উদ্ভিদকে জীবন্ত প্রাণী হিসেবে দেখতে সাহায্য করে এবং উদ্ভিদের জীবনীশক্তি ও প্রতিক্রিয়াশীলতা সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।

ফয়সাল কবীর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 6 দিন পূর্বে

বিভাগসমূহ