বাংলা ব্যাকরণের মূল নিয়মগুলো কী কী?

88 বার দেখাভাষাবাংলা বাংলা ব্যাকরণ ব্যাকরণ
0

বাংলা ব্যাকরণের মূল নিয়মগুলো কী কী?

ফয়সাল কবীর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 11, 2024
0

বাংলা ব্যাকরণের মূল নিয়মগুলো ভাষার সঠিক ব্যবহার এবং শুদ্ধভাবে বলার ও লেখার জন্য অপরিহার্য। বাংলা ব্যাকরণ ভাষার বিভিন্ন উপাদানের সঠিক বিন্যাস ও রীতি নির্ধারণ করে, যাতে ভাষা পরিষ্কার, শৃঙ্খলিত, এবং সঠিকভাবে প্রকাশিত হয়। নিচে বাংলা ব্যাকরণের প্রধান নিয়ম ও উপাদানগুলোর একটি সারসংক্ষেপ দেওয়া হলো:

১. শব্দ বিভক্তি:
বাংলা ভাষায় শব্দগুলোকে প্রধানত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:

নামপদ (বিশেষ্য): ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণী, স্থান ইত্যাদির নাম বোঝায়।
উদাহরণ: মানুষ, গাছ, শহর।
বিশেষণ: নামপদ বা ক্রিয়াপদের গুণ বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।
উদাহরণ: লম্বা, সুন্দর, চটপটে।
ক্রিয়াপদ: কাজ বা অবস্থার নাম নির্দেশ করে।
উদাহরণ: খাওয়া, যাওয়া, নাচা।
অব্যয়: যে শব্দ অন্য কোনো পদ বা বাক্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে।
উদাহরণ: এবং, কিন্তু, তবে।
২. বাক্য গঠন:
বাংলা ভাষায় বাক্য তিন ধরনের হতে পারে:

সাধারণ বাক্য: যেখানে ক্রিয়া, কর্তা এবং কর্ম সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী থাকে।
উদাহরণ: সে বই পড়ছে।
প্রশ্নবোধক বাক্য: যেখানে কোনো প্রশ্ন করা হয়।
উদাহরণ: তুমি কোথায় যাচ্ছ?
আদেশ বা অনুরোধমূলক বাক্য: যেখানে আদেশ বা অনুরোধ করা হয়।
উদাহরণ: দয়া করে দরজা খুলুন।
৩. বাক্যাংশের স্থান বিন্যাস:
বাংলা বাক্যে ক্রিয়া সাধারণত বাক্যের শেষে থাকে। বাক্য গঠনের নিয়ম হলো কর্তা + কর্ম + ক্রিয়া।

উদাহরণ: সে (কর্তা) ভাত (কর্ম) খাচ্ছে (ক্রিয়া)।
৪. লিঙ্গ ও সংখ্যা:
বাংলা ভাষায় নামপদগুলোতে লিঙ্গ এবং সংখ্যার পার্থক্য দেখা যায়:

পুংলিঙ্গ: যা পুরুষ বা ছেলে বোঝায়।
উদাহরণ: ছেলে, পুরুষ।
স্ত্রীলিঙ্গ: যা মেয়ে বা মহিলা বোঝায়।
উদাহরণ: মেয়ে, মহিলা।
একবচন: যা একটিমাত্র বস্তু বা ব্যক্তি বোঝায়।
উদাহরণ: গাছ।
বহুবচন: যা একাধিক বস্তু বা ব্যক্তি বোঝায়।
উদাহরণ: গাছগুলো।
৫. বচন নিয়ম:
বচনের নিয়মের মাধ্যমে একবচন থেকে বহুবচন তৈরি হয়। একবচনের শেষে “-রা”, “-গণ”, “-গুলি”, বা “-গুলো” যুক্ত করে বহুবচন তৈরি হয়।

উদাহরণ: ছেলে -> ছেলেরা, মানুষ -> মানুষজন।
৬. সমাস:
সমাস বলতে বোঝায় দুটি বা ততোধিক শব্দের একত্রিত হওয়া, যাতে একটি নতুন শব্দ বা অর্থ তৈরি হয়।

তৎপুরুষ সমাস: যেখানে প্রথম শব্দ দ্বিতীয় শব্দকে বিশেষায়িত করে।
উদাহরণ: দেয়াললেখা (দেয়ালে লেখা)।
কর্মধারয় সমাস: যেখানে দুটি শব্দ মিলে একটি বিশেষ অর্থ সৃষ্টি করে।
উদাহরণ: নীলকমল (নীল রঙের কমল)।
৭. বিপরীতার্থক ও সমার্থক শব্দ:
বিপরীতার্থক শব্দ: একে অপরের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে।
উদাহরণ: আলো – অন্ধকার, শুভ – অশুভ।
সমার্থক শব্দ: একই অর্থে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা যায়।
উদাহরণ: আকাশ – নভো, মাটি – ভূমি।
৮. কারক এবং বিভক্তি:
কারক হলো বাক্যে কর্তা, কর্ম এবং ক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশকারী উপাদান। বাংলা ভাষায় মোট সাতটি কারক রয়েছে এবং প্রতিটি কারকের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট বিভক্তি যুক্ত হয়:

কর্তৃকারক: কে কাজটি করছে।
উদাহরণ: সে খেলছে।
কর্মকারক: কী কাজের উপর ক্রিয়া হচ্ছে।
উদাহরণ: সে বই পড়ছে।
সম্প্রদান কারক: যে ব্যক্তি বা বস্তুর উদ্দেশ্যে কিছু করা হচ্ছে।
উদাহরণ: তাকে বই দিলাম।
অপাদান কারক: যেখান থেকে কিছু বিচ্ছিন্ন হচ্ছে বা আলাদা হচ্ছে।
উদাহরণ: গাছ থেকে পাতা পড়ছে।
৯. কালের নিয়ম:
বাংলা ক্রিয়াগুলো তিনটি কালের অধীনে বিভক্ত হয়:

বর্তমান কাল: যা এখন ঘটছে।
উদাহরণ: আমি ভাত খাচ্ছি।
অতীত কাল: যা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে।
উদাহরণ: আমি ভাত খেয়েছি।
ভবিষ্যৎ কাল: যা ভবিষ্যতে ঘটবে।
উদাহরণ: আমি ভাত খাব।
১০. বাচ্যের নিয়ম:
বাংলা ভাষায় তিন ধরনের বাচ্য রয়েছে, যা বাক্যের ক্রিয়াপদের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়:

কর্তৃবাচ্য: যেখানে কর্তা ক্রিয়ার মূল বিষয়।
উদাহরণ: সে বই পড়ে।
কর্মবাচ্য: যেখানে কর্মকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
উদাহরণ: বইটি পড়া হলো।
ভূবাচ্য: যেখানে ক্রিয়া বা অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ।
উদাহরণ: আকাশ মেঘাচ্ছন্ন।
১১. সংযুক্তি এবং অব্যয়:
বাংলা বাক্যে অব্যয় বা সংযুক্তি শব্দের মাধ্যমে বিভিন্ন অংশ সংযুক্ত হয়। অব্যয় এমন শব্দ, যা বাক্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।

উদাহরণ: এবং, কিন্তু, তবে।
১২. উপসর্গ ও প্রত্যয়:
উপসর্গ: কোনো শব্দের আগে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ সৃষ্টি করে।
উদাহরণ: অ+সুন্দর = অসুন্দর।
প্রত্যয়: কোনো শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ বা রূপ তৈরি করে।
উদাহরণ: খেল+ওয়ালা = খেলোয়ালা।
সারসংক্ষেপে, বাংলা ব্যাকরণের মূল নিয়মগুলো ভাষার শুদ্ধতা, সঠিক বাক্যগঠন, এবং ভাব প্রকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়মগুলো মেনে চললে ভাষার সৌন্দর্য ও কার্যকারিতা উভয়ই বজায় থাকে, যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিষ্কার ও প্রাঞ্জলতা আনে।

ফয়সাল কবীর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 11, 2024

বিভাগসমূহ