এ পি জে আব্দুল কালামকে ‘মিসাইল ম্যান’ কেন বলা হয়?
এ পি জে আব্দুল কালামকে ‘মিসাইল ম্যান’ কেন বলা হয়?
এ পি জে আব্দুল কালামকে ‘মিসাইল ম্যান’ বলা হয় কারণ তিনি ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)-তে তার কাজের মাধ্যমে তিনি ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখেন। বিশেষ করে প্রথম দেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য মিসাইল প্রকল্পগুলোতে তার নেতৃত্ব ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়।
নিচে ‘মিসাইল ম্যান’ হিসেবে এ পি জে আব্দুল কালামের খ্যাতির কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো:
১. ইনটিগ্রেটেড গাইডেড মিসাইল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (IGMDP)
এ পি জে আব্দুল কালামের নেতৃত্বে ভারত সরকার ইনটিগ্রেটেড গাইডেড মিসাইল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (IGMDP) শুরু করে। এর মাধ্যমে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল ভারতকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিতে পরিণত করা।
অগ্নি মিসাইল: কালামের অন্যতম বড় সাফল্য ছিল অগ্নি ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রকল্প। এটি ছিল মধ্য-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পৃথ্বী মিসাইল: তিনি পৃথ্বী মিসাইল প্রকল্পেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা ভারতের প্রথম স্বদেশি ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প ছিল এবং এটি স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২. ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণার নেতৃত্ব
এ পি জে আব্দুল কালাম ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO)-এর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। তার নেতৃত্বে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, যা তাকে “মিসাইল ম্যান” হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
ব্রহ্মোস মিসাইল: কালামের নেতৃত্বে ভারত ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল তৈরি করে, যা বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম ক্রুজ মিসাইল হিসেবে পরিচিত।
৩. পরমাণু প্রযুক্তিতে অবদান
কালাম শুধু ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতেই নয়, ভারতের পরমাণু শক্তি কর্মসূচিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ পরমাণু পরীক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন, যা ভারতকে একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
পোখরান-২ পরমাণু পরীক্ষা: এই পরীক্ষায় তার অংশগ্রহণ এবং পরমাণু প্রযুক্তির বিকাশে তার অবদান ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী করে।
৪. প্রতীকী নামকরণ
কেবল প্রযুক্তিগত সাফল্যের জন্যই নয়, আব্দুল কালামের কর্মজীবনের প্রভাব এবং তার নেতৃত্ব তাকে ‘মিসাইল ম্যান’ নামে পরিচিত করে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পে তার কাজ ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যা তাকে দেশজুড়ে এই বিশেষ নামটি এনে দেয়।
উপসংহার
এ পি জে আব্দুল কালামকে ‘মিসাইল ম্যান’ বলা হয় কারণ তার নেতৃত্বে এবং গবেষণায় ভারত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতা অর্জন করে। তার অবদান শুধু ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেনি, বরং তিনি ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতেও অনন্য অবদান রেখেছেন। তার কাজের জন্য তিনি ভারতের জনগণের কাছে বিশেষভাবে প্রিয় হয়ে উঠেছেন এবং একজন জাতীয় নায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।