বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের কারণ কী?

0

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের কারণ কী?

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে
0

বঙ্গোপসাগর দক্ষিণ এশিয়ার একটি বৃহৎ উপসাগর যা ভারতের পূর্ব দিকে, বাংলাদেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে, এবং মায়ানমারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এই উপসাগরটি ঘূর্ণিঝড়ের (সাইক্লোন) জন্মস্থল হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের গঠনে বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণ ভূমিকা পালন করে। নিচে এর প্রধান কারণগুলো বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:

১. উচ্চ সমুদ্র তাপমাত্রা (Sea Surface Temperature)
বঙ্গোপসাগরের জলবায়ুতে ঘূর্ণিঝড়ের মূল কারণ হলো সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চ তাপমাত্রা। সাধারণত ২৬.৫°C বা তার উপরে সমুদ্রের তাপমাত্রা সাইক্লোন গঠনের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে সমুদ্র থেকে বাষ্প নির্গত হয়, যা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি উৎপাদনে সহায়ক হয়।

২. বাষ্পীভবনের পরিমাণ (Moisture Content)
উচ্চ সমুদ্র তাপমাত্রা বাষ্পীভবনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। বাষ্পীভবনের ফলে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ে, যা সাইক্লোনের শক্তি বৃদ্ধি করে। জলীয় বাষ্প কনডেন্সেশনের মাধ্যমে তাপ নির্গত হয়, যা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বাড়ায় এবং সাইক্লোনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

৩. করিওলিস বল (Coriolis Effect)
কোরিওলিস বল পৃথিবীর ঘূর্ণন দ্বারা উৎপন্ন হয় এবং ঘূর্ণিঝড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ঘূর্ণিঝড়কে বৃত্তাকার গতিতে প্রবাহিত করে। বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোন গঠনের জন্য পর্যাপ্ত দূরত্ব (সাধারণত ৫° থেকে ২০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে) থাকা প্রয়োজন, কারণ খুব কাছাকাছি মূল ভূত্বক থেকে কোরিওলিস বলের প্রভাব কম থাকে।

৪. কম্প্যাক্ট বায়ুমণ্ডলীয় চাপ (Low Pressure Systems)
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় গঠনের সময় একটি কম্প্যাক্ট বায়ুমণ্ডলীয় চাপ সৃষ্টি হয়। উচ্চ চাপের থেকে নিম্ন চাপের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়, এবং এই প্রবাহ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র দিকে ঘূর্ণায়মান গতিতে মোড় নেয়।

৫. মৌসুমি বায়ু প্রবাহ (Monsoon Winds)
ভারতে মৌসুমী বায়ু প্রবাহের সময়, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমের (জুন থেকে সেপ্টেম্বর), বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে উত্তরের থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত বায়ু সাইক্লোন গঠনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।

৬. তাপমাত্রার পার্থক্য (Temperature Gradient)
সমুদ্রের তাপমাত্রার পার্থক্য এবং বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের তাপমাত্রার পার্থক্য ঘূর্ণিঝড়ের গঠন ও প্রবণতায় প্রভাব ফেলে। এই তাপমাত্রার পার্থক্য বায়ুর গতিবেগ ও স্থিতিশীলতায় পরিবর্তন আনে, যা সাইক্লোনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

৭. ভূগোল ও উপসাগরের আকৃতি (Geography and Bay Shape)
বঙ্গোপসাগরের আয়তন এবং আকৃতি ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। উপসাগরের প্রান্তে ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়, তবে মাঝামাঝি অঞ্চলে এটি শক্তিশালী হতে পারে। উপসাগরের প্রবাহ ও ঘূর্ণায়মান গতি সাইক্লোনের পথ ও গতি নির্ধারণ করে।

৮. জ্বালানি সংরক্ষণ (Energy Conservation)
ঘূর্ণিঝড় গঠনের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। উচ্চ সমুদ্র তাপমাত্রা ও প্রচুর বাষ্পীভবনের ফলে পর্যাপ্ত জ্বালানি সংরক্ষিত হয়, যা সাইক্লোনকে শক্তিশালী করে তোলে। এই জ্বালানি ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণন এবং বায়ুর গতিশীলতায় ব্যবহার হয়।

৯. বিদ্যুৎ প্রবাহ (Wind Shear)
ঘূর্ণিঝড়ের গঠনে বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিবর্তন ও তীব্রতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘূর্ণিঝড়ের গঠনে সহায়ক হয়, তবে উচ্চ বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘূর্ণিঝড়ের গঠনকে বাধা দিতে পারে।

১০. জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change)
আধুনিক যুগে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাইক্লোনের সংখ্যা এবং শক্তিতে বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়িয়ে সাইক্লোন গঠনের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলছে।

নিষ্কর্ষ
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের গঠন ও প্রভাব বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং পরিবেশগত কারণের সম্মিলিত প্রভাব। উচ্চ সমুদ্র তাপমাত্রা, বাষ্পীভবনের পরিমাণ, কোরিওলিস বল, মৌসুমী বায়ু প্রবাহ, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলি সাইক্লোনের গঠন ও শক্তিকে প্রভাবিত করে। বর্তমান যুগে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও গভীরভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা এবং শক্তিতে বৃদ্ধির সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রতিকার এবং প্রস্তুতির জন্য সরকারের নীতিমালা, জনসাধারণের সচেতনতা, এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমাতে এবং মানবসম্পদ রক্ষা করতে এই পদক্ষেপগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আহমেদ রুসেল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে
আপনি 1 উত্তরের মধ্যে 1টি দেখছেন, সব উত্তর দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বিভাগসমূহ