বাংলাদেশে সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থার পার্থক্য কী?

0

বাংলাদেশে সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থার পার্থক্য কী?

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন 7 দিন পূর্বে
0

বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে বর্তমানে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান। তবে, রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিভিন্ন ধরনের মডেল আছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা। এই নিবন্ধে আমরা সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থার মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি আলোচনা করবো এবং কিভাবে এসব পার্থক্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে প্রভাবিত করতে পারে তা পর্যালোচনা করবো।

১. সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা

ক. সংজ্ঞা

সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা হলো এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামো যেখানে প্রধান নির্বাহী সরকার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সংসদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্ব থাকে সংসদকে জবাবদিহি করার।

খ. মূল বৈশিষ্ট্য

  • প্রধান নির্বাহী: প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার গঠন হয়, যিনি সাধারণত সংসদীয় অধীনস্থ প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা।
  • সংসদীয় সংযোগ: সরকার ও সংসদ মধ্যেকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে, এবং সরকারের নীতি ও কার্যক্রম সংসদ দ্বারা নিরীক্ষণ করা হয়।
  • নির্বাচন ও পদত্যাগ: প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ বা সংসদীয় মেজাজ পরিবর্তনের কারণে সরকারের পরিবর্তন সহজে ঘটে।
  • ক্ষমতার একত্রীকরণ: নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতা একসাথে কাজ করে, যা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।

গ. বাংলাদেশে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা

বাংলাদেশে বর্তমানে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হচ্ছে, যেখানে জাতীয় সংসদ (জাতীয় পরিষদ) এবং প্রধানমন্ত্রী সরকার পরিচালনা করে। নির্বাচিত সদস্যরা সংসদে বসে আইন প্রণয়ন করে এবং সরকারকে তদারকি করে।

২. রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা

ক. সংজ্ঞা

রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা হলো এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামো যেখানে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান এবং নির্বাহী ক্ষমতার শীর্ষে থাকে। রাষ্ট্রপতি সাধারণত সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন এবং সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রাখেন।

খ. মূল বৈশিষ্ট্য

  • প্রধান নির্বাহী: রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করেন এবং সরকার পরিচালনার জন্য অধিক ক্ষমতা রাখেন।
  • স্বতন্ত্র ক্ষমতা: নির্বাহী, আইন প্রণয়ন এবং বিচার ব্যবস্থার ক্ষমতা পৃথকভাবে পরিচালিত হয়।
  • দীর্ঘস্থায়ী সরকার: রাষ্ট্রপতি দীর্ঘমেয়াদী পদে থাকেন, যা সরকারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পারে।
  • নির্বাচন ও পদত্যাগ: রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা পুনর্নির্বাচন কঠিন হতে পারে, যা ক্ষমতার স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করে।

গ. সম্ভাব্য পার্থক্য বাংলাদেশে

যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান নির্বাহী ও রাজনৈতিক নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করতে পারেন। এতে সরকার ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন স্পষ্ট হবে এবং সরকারের কার্যক্রমে রাষ্ট্রপতির সরাসরি প্রভাব থাকবে।

৩. সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থার তুলনা

বৈশিষ্ট্য সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা
প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সরকার
ক্ষমতার বিভাজন নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সংযুক্ত নির্বাহী, আইন প্রণয়ন ও বিচার ক্ষমতা পৃথক
সরকারের স্থায়িত্ব সংসদীয় সমর্থনের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রপতির স্থিতিশীল পদে থাকার সম্ভাবনা
নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন সংসদ থেকে রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত
নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ দ্রুত ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময়সাপেক্ষ হতে পারে

৪. সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থার প্রভাব

ক. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

  • সংসদীয় ব্যবস্থা: সরকারের পরিবর্তন সহজ, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হ্রাস করতে পারে, তবে তা সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক।
  • রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা: সরকারের স্থায়িত্ব বাড়ায়, তবে রাজনৈতিক বিরোধ বাড়ার সম্ভাবনা কমে না।

খ. ক্ষমতার ভারসাম্য

  • সংসদীয় ব্যবস্থা: ক্ষমতার ভারসাম্য সংসদ এবং নির্বাহী সরকারের মধ্যে ঘটে।
  • রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা: ক্ষমতার ভারসাম্য রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য শাখার মধ্যে স্পষ্টভাবে বিভক্ত।

গ. জনগণের অংশগ্রহণ

  • সংসদীয় ব্যবস্থা: জনগণের প্রতিনিধিত্ব সরাসরি সংসদে হয়।
  • রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা: জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে সীমাবদ্ধ।

উপসংহার

বাংলাদেশের বর্তমান সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সমৃদ্ধ করেছে, যেখানে সরকার ও সংসদ একসাথে কাজ করে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করে। তবে, রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ক্ষমতার বিভাজন ও সরকারের স্থায়িত্বে পরিবর্তন আসতে পারে। প্রতিটি শাসন ব্যবস্থার নিজস্ব সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক কাঠামো নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই পার্থক্যগুলি বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নোট: রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন একটি জটিল এবং বহুস্তরীয় প্রক্রিয়া, যা দেশের সাংবিধানিক কাঠামো, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের মতামতের উপর নির্ভর করে। কোনো পরিবর্তন আনার আগে বিস্তারিত আলোচনা ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

আরিফুর রহমান প্রকাশের স্থিতি পরিবর্তিত করেছেন 7 দিন পূর্বে
আপনি 1 উত্তরের মধ্যে 1টি দেখছেন, সব উত্তর দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বিভাগসমূহ