প্রাণীরা কীভাবে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়?

107 বার দেখাপরিবেশ ও প্রকৃতিপরিবেশ প্রাণী
0

প্রাণীরা কীভাবে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়?

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 13, 2024
0

প্রাণীরা তাদের বাস্তুতন্ত্রে টিকে থাকতে এবং বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন উপায়ে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়। এ প্রক্রিয়াটিকে অভিযোজন বা “adaptation” বলা হয়। অভিযোজন প্রাণীদের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সাথে খাপ খাইয়ে জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এখানে কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো, যার মাধ্যমে প্রাণীরা পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়:

১. শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন
শরীরের গঠন পরিবর্তন: কিছু প্রাণী তাদের শরীরের গঠন পরিবর্তন করে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়। যেমন, মরুভূমির প্রাণীদের ত্বক মোটা এবং জল সংরক্ষণক্ষম থাকে, যা তাদের শুষ্ক পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে।
শরীরের রং: কিছু প্রাণীর ত্বকের রং তাদের পরিবেশের সাথে মিলিয়ে পরিবর্তিত হয়, যাতে তারা শত্রুদের থেকে রক্ষা পায়। এটি ক্যামোফ্লেজ নামে পরিচিত। যেমন, সাদা ভাল্লুক বরফের রংয়ের সাথে মিশে যেতে পারে।
২. আচরণগত অভিযোজন
আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলা: কিছু প্রাণী শীতকালে শীতনিদ্রা (হাইবারনেশন) যায় এবং গ্রীষ্মকালে বেশি গরমে আস্থা নেওয়ার জন্য তাপনিদ্রা (এস্টিভেশন) পালন করে।
খাদ্য সংগ্রহের পরিবর্তন: খাদ্য সংকটের সময় কিছু প্রাণী তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে। যেমন, কিছু প্রাণী মাংসাশী থেকে উদ্ভিদাশী হতে পারে।
৩. স্থানান্তর (Migration)
মৌসুমি স্থানান্তর: কিছু পাখি এবং প্রাণী শীতকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে উষ্ণ অঞ্চলে চলে যায় এবং গরমের সময়ে আবার ফিরে আসে। যেমন, মুনার্ক প্রজাপতি ও অভিজ্ঞান পাখি।
জলবায়ুর উপর নির্ভর করে স্থানান্তর: কিছু সামুদ্রিক প্রাণী ঠাণ্ডা জল থেকে উষ্ণ জলে চলে যায় খাদ্য সংগ্রহ বা প্রজননের জন্য।
৪. শারীরিক অভিযোজন
শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিবর্তন: কিছু জলজ প্রাণী, যেমন মাছ, গিলের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে। তারা জল থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে তাদের শরীরে পাঠায়।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: কিছু প্রাণী তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, উট তাদের শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে এবং কমাতে পারে যাতে তারা মরুভূমির তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে নিতে পারে।
৫. বাসস্থানের পরিবর্তন
আশ্রয় নির্মাণ: কিছু প্রাণী তাদের পরিবেশে নিজস্ব আশ্রয় তৈরি করে। যেমন, বিড়াল বা খরগোশ মাটি খুঁড়ে গর্ত তৈরি করে এবং এতে থাকে।
গাছের মধ্যে বাসা তৈরি: কিছু পাখি গাছের মধ্যে বাসা তৈরি করে তাদের ডিম এবং সন্তানদের নিরাপত্তা দেয়।
৬. খাদ্য সংগ্রহ ও পানির সংরক্ষণ
পানির সংরক্ষণ: মরুভূমির প্রাণীরা যেমন উট, তাদের শরীরে পানি সংরক্ষণ করতে পারে, যা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পানির অভাবে টিকে থাকতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাস: কিছু প্রাণী বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে। যেমন, শেয়াল উভয়ই উদ্ভিদ এবং মাংস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
৭. প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা
ক্যামোফ্লেজ: কিছু প্রাণী তাদের পরিবেশের সাথে মিশে যেতে রং বা আকার পরিবর্তন করে। যেমন, কিছু কীট বা সরীসৃপ তাদের চারপাশের রংয়ের সাথে মিলিয়ে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারে।
বিষাক্ততা: কিছু প্রাণী শত্রুদের থেকে বাঁচতে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন করতে পারে। যেমন, ব্যাঙের কিছু প্রজাতি তাদের ত্বক থেকে বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে।
৮. প্রজনন অভিযোজন
প্রজননের সময় পরিবর্তন: কিছু প্রাণী তাদের প্রজননের সময় পরিবর্তন করে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে, যাতে সন্তান জন্মানোর সময় পর্যাপ্ত খাদ্য পাওয়া যায়।
আশ্রয় ও সুরক্ষা প্রদান: কিছু প্রাণী তাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করে। এটি সন্তানদের নিরাপত্তা এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ায়।
উপসংহার
প্রাণীরা বিভিন্ন উপায়ে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়, যা তাদের বেঁচে থাকা এবং প্রজাতির টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোজনের মাধ্যমে তারা পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়, যা তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ায় এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অভিযোজনগুলি প্রমাণ করে যে প্রকৃতি কতটা বৈচিত্র্যময় এবং অভিযোজিত হতে সক্ষম।

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 13, 2024
আপনি 1 উত্তরের মধ্যে 1টি দেখছেন, সব উত্তর দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বিভাগসমূহ