অশোক কে ছিলেন?

680 বার দেখাইতিহাসইতিহাস
0

অশোক বা অশোক মহাভারত (Ashoka the Great) ছিলেন প্রাচীন ভারতের মौर্য সাম্রাজ্যের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। তিনি প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২৬৮ থেকে ২৩২ সাল পর্যন্ত শাসন করেছিলেন এবং তাঁর শাসনকালে ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম অংশ একত্রিত হয়। অশোকের শাসনকাল এবং তাঁর নীতিমালা ভারতীয় ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।

জীবনচরিত ও শাসনকাল

জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি:
অশোকের জন্ম প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩১৫ সালে মৌর্য রাজবংশের এক প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যে হয়।
তিনি মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চandragupta Maurya এর নাতি এবং বিন্দুস্বর এর পুত্র ছিলেন।
শাসনকালে মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তার:
অশোকের শাসনকালে মৌর্য সাম্রাজ্য উত্তর ভারতের প্রায় সব প্রদেশ, বাংলাদেশের কিছু অংশ, পাকিস্তানের উত্তরাংশ, এবং বর্তমানের উত্তর-পশ্চিমী ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
তাঁর সামরিক দক্ষতা এবং কৌশলগত নেতৃত্বের ফলে সাম্রাজ্যের সীমানা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়।
কলিঙ্গ যুদ্ধ এবং পরিবর্তন

কলিঙ্গ যুদ্ধ:
অশোকের শাসনকালের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল কলিঙ্গ যুদ্ধ (প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২৬৮ সালে)। এই যুদ্ধটি অশোকের বিরোধী রাজ্য কলিঙ্গার সাথে সংঘটিত হয়।
যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে অশোকের সামরিক বাহিনী বিপুল সংখ্যক নিহত হয় এবং অশোক নিজেও গভীরভাবে কষ্ট পায়।
বৌদ্ধ ধর্মের দীক্ষা:
কলিঙ্গ যুদ্ধে ঘটিত হিংসা এবং দুঃখের পরিণামে অশোক বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন।
তিনি বৌদ্ধের শিখা গ্রহণ করেন এবং তাঁর জীবন ও শাসনকালের নীতিমালা বৌদ্ধ দর্শনের আলোকে পরিবর্তিত হয়।
অশোকের নীতি ও অবদান

ধর্মনীতি (Dharma):
অশোক তাঁর শাসনকালে ধর্ম (Dharma) নামে পরিচিত নৈতিক ও নৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করেন।
এই নীতিমালার মধ্যে সহিষ্ণুতা, অহিংসা, ধর্মীয় সহাবস্থান, এবং সামাজিক কল্যাণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মৌর্যস্তুপ ও দণ্ডনীতিমালা:
অশোকের সময়ে মউর্য সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মৌর্যস্তুপ (Ashoka Pillars) স্থাপন করা হয়, যেগুলোতে তাঁর বিভিন্ন নীতিমালা ও আদেশ খোদাই করা হয়।
অশোকের দণ্ডনীতিমালা (Edicts of Ashoka) নামে পরিচিত এই খোদাইগুলি বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা, সামাজিক কল্যাণ, এবং প্রশাসনিক নীতিমালার প্রতিফলন ঘটায়।
বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার:
অশোক বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। তিনি বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধ মঠ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
তাঁর প্রচেষ্টায় বৌদ্ধ ধর্ম ভারতবর্ষের বাইরে যেমন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, তেমনই মধ্য এশিয়ায় বিস্তৃত হয়।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি:
অশোক তাঁর শাসনকালে কৃষি, শিল্প, এবং বাণিজ্যিক কার্যকলাপের উন্নতি ঘটান।
তিনি রেলপথ, সড়ক, এবং পানি সংরক্ষণের মতো অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করেন, যা সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
উপলব্ধি ও উত্তরাধিকার

শান্তির প্রতীক:
অশোকের পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রা তাকে শান্তির প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি হিংসার পরিবর্তে শান্তি এবং সহিষ্ণুতার দিকে মনোনিবেশ করেন।
ইতিহাসে স্থান:
অশোকের শাসনকালকে প্রায়ই মৌর্য সাম্রাজ্যের সোনালী যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল অধ্যায়।
তাঁর নেতৃত্বে মউর্য সাম্রাজ্য স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করে।
আধ্যাত্মিক ও নৈতিক প্রভাব:
অশোকের নীতিমালা এবং বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা আজও মানবতার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপসংহার

অশোক ছিলেন প্রাচীন ভারতের এক উজ্জ্বল সম্রাট, যিনি তার সামরিক দক্ষতা, নৈতিক নেতৃত্ব, এবং আধ্যাত্মিক পরিবর্তনের মাধ্যমে মউর্য সাম্রাজ্যকে ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। তাঁর জীবন ও শাসনকালের নীতিমালা আজও মানবজাতির জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে রয়ে গেছে, যা শান্তি, সহিষ্ণুতা, এবং সামাজিক কল্যাণের মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেয়।

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অক্টোবর 5, 2024

বিভাগসমূহ