আশেরীয় সভ্যতা কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল?
আশেরীয় সভ্যতা (Assyrian Civilization) মূলত টাইগ্রিস নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল। টাইগ্রিস নদী বর্তমান ইরাকের উত্তরাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এটি প্রাচীন মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের দুটি প্রধান নদীর একটি, অন্যটি ইউফ্রেটিস নদী। আশেরীয়রা মেসোপটেমিয়ার উত্তরাঞ্চলে বসবাস করত এবং তাদের প্রধান শহরগুলি, যেমন আশুর এবং নিনেভেহ, টাইগ্রিস নদীর তীরেই অবস্থিত ছিল।
বিশদ বিবরণ
ভৌগোলিক অবস্থান:
মেসোপটেমিয়া: মেসোপটেমিয়া শব্দের অর্থ “নদীর মধ্যবর্তী ভূমি”, যা টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলকে বোঝায়। এই অঞ্চলটি বর্তমান ইরাক, সিরিয়া এবং তুরস্কের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত।
আশেরীয় সাম্রাজ্য: আশেরীয়রা মেসোপটেমিয়ার উত্তরাংশে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, যা খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৫০০ থেকে ৬০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।
প্রধান শহর ও কেন্দ্র:
আশুর (Ashur): এটি আশেরীয় সাম্রাজ্যের প্রথম রাজধানী এবং ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল। শহরটি টাইগ্রিস নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত।
নিনেভেহ (Nineveh): পরবর্তীকালে আশেরীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী হয়। এটি টাইগ্রিস নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত ছিল এবং বর্তমান ইরাকের মসুল শহরের নিকটবর্তী।
নদীর গুরুত্ব:
কৃষি ও সেচ ব্যবস্থা: টাইগ্রিস নদীর পানি ব্যবহার করে আশেরীয়রা উন্নত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যা তাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে।
বাণিজ্য ও পরিবহন: নদীপথ আশেরীয়দের বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও পণ্য পরিবহনের সহজ উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হত।
সামরিক কৌশল: টাইগ্রিস নদী প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করত এবং সামরিক অভিযানে সুবিধা প্রদান করত।
সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
স্থাপত্য ও শিল্পকলা: আশেরীয়রা বিশাল প্যালেস, মন্দির, এবং অন্যান্য স্থাপত্য নির্মাণ করে, যেমন নিনেভেহের গ্রন্থাগার, যেখানে প্রচুর কিউনিফর্ম ট্যাবলেট সংরক্ষিত ছিল।
লিপি ও সাহিত্য: আশেরীয়রা কিউনিফর্ম লিপি ব্যবহার করে আইন, সাহিত্য এবং প্রশাসনিক নথি রচনা করত।
উপসংহার
আশেরীয় সভ্যতা টাইগ্রিস নদীর তীরে বিকশিত হয়েছিল, যা তাদের কৃষি, বাণিজ্য, সামরিক শক্তি এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। টাইগ্রিস নদীর উপত্যকা আশেরীয়দের জন্য একটি আদর্শ স্থানে পরিণত হয়, যা তাদের প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত করতে সহায়তা করেছিল।