সীতা কে ছিলেন?

0

সীতা ছিলেন হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ এর প্রধান নারী চরিত্র এবং ভগবান শ্রী রামের স্ত্রী। তিনি সনাতন ধর্মে দেবী লক্ষ্মীর অবতার হিসেবে বিবেচিত হন। সীতা তাঁর সতীত্ব, ধৈর্য, এবং নৈতিকতার জন্য সম্মানিত এবং হিন্দু সংস্কৃতিতে নারীর আদর্শ হিসেবে পরিচিত।

সীতার জীবন এবং অবদান

জন্ম এবং উৎপত্তি:
জন্মস্থান: সীতা জন্মগ্রহণ করেন মিথিলা নগরীর রাজা জনকের কন্যা হিসেবে। একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, জনক রাজা জমি চাষ করার সময় ভূমি থেকে সীতাকে খুঁজে পান, তাই তিনি ভূমিজা (ভূমি থেকে জন্ম নেওয়া) নামে পরিচিত।
নামকরণ: “সীতা” শব্দের অর্থ হলো কৃষির জন্য ব্যবহৃত জমি চিহ্ন। এই নামটি তাঁর উৎপত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।
বিবাহ:
স্বয়ম্বর সভা: রাজা জনক একটি স্বয়ম্বরের আয়োজন করেন যেখানে শর্ত ছিল, যে বীর শিবের ধনুক ভঙ্গ করতে পারবেন, তিনি সীতাকে বিয়ে করবেন।
রামের বিজয়: শ্রীরাম, অযোধ্যার রাজপুত্র এবং দশরথের পুত্র, এই চ্যালেঞ্জ সম্পন্ন করেন এবং সীতার সাথে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
অরণ্যবাস এবং বনবাস:
রাজ্যত্যাগ: রাজা দশরথের প্রতিশ্রুতির কারণে শ্রীরামকে ১৪ বছরের জন্য বনবাসে যেতে হয়। সীতা স্বামীর সঙ্গে বনবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
রাবণের অপহরণ: বনবাসের সময় লঙ্কার রাজা রাবণ সীতাকে অপহরণ করেন এবং লঙ্কায় নিয়ে যান।
লঙ্কা যাত্রা এবং মুক্তি:
রামের অনুসন্ধান: শ্রীরাম তাঁর ভাই লক্ষ্মণ এবং ভক্ত হনুমানের সহায়তায় সীতাকে উদ্ধার করার জন্য অভিযান শুরু করেন।
যুদ্ধ এবং বিজয়: দীর্ঘ যুদ্ধের পর রাম রাবণকে পরাজিত করে সীতাকে মুক্ত করেন।
অগ্নি পরীক্ষা:
বিশ্বাসের পরীক্ষা: সীতাকে সতীত্ব প্রমাণের জন্য অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি অগ্নির মধ্যে প্রবেশ করেও নিরাপদে বেরিয়ে আসেন, যা তাঁর পবিত্রতা প্রমাণ করে।
ফিরে আসা এবং পরবর্তী জীবন:
অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন: বনবাস শেষে রাম ও সীতা অযোধ্যায় ফিরে আসেন এবং রাজ্যভার গ্রহণ করেন।
বাস্তব থেকে প্রস্থান: পরবর্তীতে সামাজিক সমালোচনার মুখে সীতা পুনরায় বনবাসে চলে যান এবং দুই পুত্র লব এবং কুশ এর জন্ম দেন।
ভূমিদেবীর কাছে প্রত্যাবর্তন: জীবনের শেষে সীতা তাঁর মায়ের কাছে (ভূমিদেবী) ফিরে যেতে মাটির মধ্যে বিলীন হন।
সীতার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব

নারীত্বের প্রতীক: সীতা সতীত্ব, নৈতিকতা, এবং আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে হিন্দু সমাজে সম্মানিত।
ধর্মীয় উৎসব: দীপাবলি এবং রামনবমীসহ বিভিন্ন হিন্দু উৎসবে সীতার কাহিনী স্মরণ করা হয়।
সাহিত্য ও শিল্পকলায় উপস্থিতি: সীতার চরিত্র বহু সাহিত্যকর্ম, নাটক, চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
আদর্শ স্ত্রী এবং কন্যা: সীতা আদর্শ স্ত্রী, কন্যা, এবং মায়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত, যা সমাজে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে নির্দেশ করে।
উপসংহার

সীতা হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত চরিত্র। তাঁর জীবন কাহিনী শুধু একটি পৌরাণিক উপাখ্যান নয়, বরং নৈতিকতা, সততা, এবং আত্মত্যাগের শিক্ষা প্রদান করে। সীতা শতাব্দী ধরে ভারতের সংস্কৃতি, ধর্ম, এবং সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে আসছেন এবং তিনি সর্বদা নারীত্বের মূর্ত প্রতীক হিসেবে সম্মানিত হবেন।

রুদ্রনীল দাশগুপ্ত Answered question 2 দিন ago