মহাভারত কী?

Solved1.18K viewsসাহিত্যভারতবর্ষ
0

মহাভারত কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস রচিত সংস্কৃত মহাকাব্য। চন্দ্রবংশীয় কুরু-পান্ডবদের ভ্রাতৃবিদ্বেষ ও যুদ্ধ এর মূল উপজীব্য। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররা (দুর্যোধনাদি শতভাই) প্রপিতামহ কুরুর নামানুসারে কুরু বা কৌরব এবং পান্ডুর পুত্ররা (যুধিষ্ঠিরাদি পঞ্চভাই) পিতার নামানুসারে পান্ডব নামে পরিচিত। কুরুপক্ষের প্রধান দুর্যোধন, আর পান্ডবপক্ষের প্রধান যুধিষ্ঠির। কুরুক্ষেত্র নামক স্থানে এঁদের মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধে কুরুপক্ষের সহায়তায় প্রধানত ছিলেন ভীষ্ম, দ্রোণ ও কর্ণ, আর পান্ডবপক্ষে ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।

মহাভারতের রচনাকাল নিয়ে মতবিরোধ আছে। প্রাচীনপন্থী পন্ডিতদের মতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের পূর্বে মহাভারত রচিত হয়, কিন্তু আধুনিক ও ইউরোপীয় পন্ডিতদের মতে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় থেকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে মহাভারত রচিত হয়। প্রথম দিকে মহাভারত ‘জয়’ নামে পরিচিত ছিল, যার শ্লোকসংখ্যা ছিল ৮-১০ হাজার। যুগে যুগে প্রক্ষেপণের ফলে শ্লোকসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং বর্তমানে প্রচলিত মহাভারতের শ্লোকসংখ্যা ন্যূনাধিক এক লাখ। শ্লোকগুলি ষোলো মাত্রিক চরণে রচিত।

ভারতের প্রায় সকল প্রাদেশিক ভাষায় মহাভারতের অনুবাদ হয়েছে। বাংলা ভাষায়ও হয়েছে, তবে বাংলা মহাভারত রচয়িতার নিজস্ব জীবনবোধ ও সমাজচেতনা এবং রচনাশৈলীর স্বাতন্ত্র্যের কারণে তা মৌলিক কাব্যের মর্যাদা লাভ করেছে।

বাংলা মহাভারতের রচয়িতা একাধিক। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কবি নিজের মতো করে মহাভারত রচনা করেছেন। কবীন্দ্র পরমেশ্বর রচিত কবীন্দ্র মহাভারত বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মহাভারত। সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫১৯) চট্টগ্রামের শাসনকর্তা পরাগল খানের নির্দেশে তাঁর সভাকবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে সংক্ষিপ্তাকারে এই অষ্টাদশপর্ব মহাভারত রচনা করেন। এজন্য এর আরেক নাম হয় পরাগলী মহাভারত।

অন্য একটি মতে সঞ্জয় রচিত মহাভারত প্রথম বাংলা মহাভারত। এছাড়া পরাগল খানের পুত্র ছোটে/ছুটি খানের (প্রকৃত নাম নসরৎ খান, ১৫১৯-৩২) নির্দেশে তাঁর সভাকবি শ্রীকরনন্দীও বাংলায় জৈমিনি মহাভারতের অশ্বমেধপর্বের ভাবানুবাদ করেন। এর অপর নাম ছুটিখানী মহাভারত। ষোড়শ শতকের কবি নিত্যানন্দ ঘোষ বৃহদাকারে মহাভারত রচনা করেন যা পশ্চিমবঙ্গে সমধিক প্রচলিত ছিল। এ শতকেই উড়িষ্যার রাজা মুকুন্দদেবের সভাকবি দ্বিজ রঘুনাথ রচিত ‘অশ্বমেধপর্ব’, উত্তর রাঢ়ের কবি রামচন্দ্র খানের ‘অশ্বমেধপর্ব’ এবং কোচবিহারের রাজসভার কবি রামসরস্বতীর ‘বনপর্ব’ এবং পীতাম্বর দাসের ‘নলদময়ন্তী উপাখ্যান’ও এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।

সপ্তদশ শতকে কাশীরাম দাস পদ্যে মহাভারত রচনা করেন, যা বাঙালিদের নিকট সর্বাধিক জনপ্রিয়। কাশীদাসী মহাভারত আঠারো পর্ব এবং একশত পর্বাধ্যায়ে বিভক্ত। আদিপর্বে বংশ বিবরণ, জতুগৃহদাহ, পঞ্চপান্ডবের সঙ্গে দ্রৌপদীর বিবাহ; সভাপর্বে যুধিষ্ঠিরের দ্যূতক্রীড়া ও পরাজয়বরণ; বনপর্বে পান্ডবদের বনগমন; বিরাটপর্বে বিরাটের গৃহে পান্ডবদের অজ্ঞাতবাস; উদ্যোগপর্বে যুদ্ধের জন্য প্রস্ত্ততি; ভীষ্মপর্বের সূচনায় গীতা এবং পরে যথাক্রমে দ্রোণ, কর্ণ, শল্য ও সৌপ্তিক পর্ব পর্যন্ত কৌরব-পান্ডবের যুদ্ধ; স্ত্রীপর্বে স্বামিহারা স্ত্রীদের বিলাপ; শান্তিপর্ব ও অনুশাসনপর্বে রাজধর্ম; অশ্বমেধপর্বে যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ যজ্ঞানুষ্ঠান; আশ্রমবাসিকপর্বে ধৃতরাষ্ট্র প্রমুখের আশ্রমবাস; মৌষলপর্বে যদুবংশ ধ্বংস; মহাপ্রস্থানিকপর্বে পরীক্ষিৎকে রাজ্যে অভিষিক্ত করে পান্ডবদের মহাপ্রস্থান এবং সর্বশেষ স্বর্গারোহণপর্বে যুধিষ্ঠিরের নরক দর্শন ও পরলোকগত অর্জুনাদিকে দর্শন কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

কাশীরামের পরে মহাভারত রচয়িতা হিসেবে আরও যাঁদের নাম পাওয়া যায় তাঁরা হলেন ঘনশ্যাম দাস, অনন্ত মিশ্র, রামনারায়ণ দত্ত, রামকৃষ্ণ কবিশেখর, শ্রীনাথ ব্রাহ্মণ, কবিচন্দ্র চক্রবর্তী, ষষ্ঠীধর সেন, তৎপুত্র গঙ্গাদাস সেন, বাসুদেব, ত্রিলোচন চক্রবর্তী, দৈবকীনন্দন, কৃষ্ণরাম, রামনারায়ণ ঘোষ, লোকনাথ দত্ত, রাজেন্দ্র দাস, গোপীনাথ দত্ত, গঙ্গাদাস সেন, সৃষ্টিধর সেন প্রমুখ। এঁদের রচনা অধিকাংশই অসম্পূর্ণ এবং এ কারণেই সেগুলি সুধীসমাজে তেমন প্রচার পায়নি। উনিশ শতকে কালীপ্রসন্ন সিংহ এবং রাজশেখর বসুর গদ্যানুবাদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সময় কেউ কেউ মহাভারতের ইংরেজি অনুবাদও করেছেন।

মহাভারতে বিভিন্ন মত ও পথের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। এতে শৈব, শাক্ত ও বৈষ্ণব দর্শনের সমন্বয় প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। এটি একাধারে মহাকাব্য, ইতিহাস, পুরাণ, ধর্মশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র, কামশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র, মোক্ষশাস্ত্র ইত্যাদি। এই মহাকোষগ্রন্থ প্রাচীন ভারতের এক বিশাল জ্ঞানভান্ডার। তখনকার সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, গার্হস্থ্যবিদ্যা, ভক্তিবাদ, যুদ্ধনীতি, রোম্যান্টিক কল্পগাথা, অসংখ্য মিথ, জ্যোতির্বিদ্যা, সম্মোহনবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, নৃত্যবিদ্যা সবকিছুর সমাবেশ ঘটেছে মহাভারতে। গুরুত্বের দিক থেকে তাই একে বলা হয় পঞ্চমবেদ। প্রসিদ্ধ ধর্মদর্শনগ্রন্থ ভগবদগীতা এর ষষ্ঠ পর্বের অন্তর্ভুক্ত।

মহাভারতের চরিত্রসমূহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাওয়া-পাওয়া, লাভ-ক্ষতি, লোভ-মোহ, আশা-নিরাশা, ধর্ম-অধর্ম ও পাপ-পুণ্যের প্রতীক। এখানে ভীষ্মের মতো বিশাল ব্যক্তিত্ব, ধর্মনিষ্ঠ যুধিষ্ঠির, মহীয়সী গান্ধারী, প্রাজ্ঞ বিদুর, ধৈর্যশীলা কুন্তী, বুদ্ধিদীপ্তা তেজস্বিনী দ্রৌপদী, বীর যোদ্ধা কর্ণার্জুন এবং মহান শ্রীকৃষ্ণ চিরস্মরণীয়। তাঁদের প্রত্যেকের জীবনদর্শনই মানুষকে উদ্দীপিত করে, অনুপ্রাণিত করে। অন্যদিকে আবার দুর্যোধন-দুঃশাসনের বিদ্বেষপরায়ণতা ও নীতিহীনতা, কুটিলবুদ্ধি শকুনি প্রমুখ যেন লোভ-লালসাপূর্ণ এক অনাকাঙ্ক্ষিত জীবনের প্রতীক।

বহু শতাব্দী ধরে ভাস-কালিদাস-রবীন্দ্র-নজরুল প্রমুখ কবি, চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর্যশিল্পী মহাভারত থেকে তাঁদের সৃষ্টির অনুপ্রেরণা ও উপাদান লাভ করেছেন। এটি গণজীবন ও লোকসংস্কৃতির ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে মহাভারতের প্রভাব অপরিসীম।

আরিফুর রহমান Selected answer as best জানুয়ারি 12, 2023
0

মহাভারত

মহাভারত (সংস্কৃত: महाभारतम्) সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রাচীন ভারতের দুটি প্রধান মহাকাব্যের অন্যতম (অপরটি হল রামায়ণ)। এই মহাকাব্যটি সংস্কৃত শাস্ত্রের ইতিহাস অংশের অন্তর্গত।

মহাভারতের মূল উপজীব্য বিষয় হল কৌরব ও পাণ্ডবদের গৃহবিবাদ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি। তবে এই আখ্যানভাগের বাইরেও দর্শন ও ভক্তির অধিকাংশ উপাদানই এই মহাকাব্যে সংযোজিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ – এই চার পুরুষার্থ সংক্রান্ত একটি আলোচনা (১২।১৬১) সংযোজিত হয়েছে এই গ্রন্থে। মহাভারত-এর অন্তর্গত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা ও উপাখ্যানগুলি হল ভগবদ্গীতা, দময়ন্তীর উপাখ্যান, রামায়ণের একটি সংক্ষিপ্ত পাঠান্তর ইত্যাদি; তবে এগুলোকে মহাভারত-রচয়িতার নিজস্ব সৃষ্টি বলে মনে করা হয়।

মহাভারত কী?

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাভারতের রচয়িতা ব্যাসদেব(কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস)। অনেক গবেষক এই মহাকাব্যের ঐতিহাসিক বিকাশ ও রচনাকালীন স্তরগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন। অধুনা প্রাপ্ত পাঠটির প্রাচীনতম অংশটি মোটামুটি ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ গুপ্তযুগে রচিত হয়। মহাভারতের মূলপাঠ তার বর্তমান রূপটি পরিগ্রহ করে গুপ্তযুগের প্রথমাংশে (খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী)। মহাভারত কথাটির অর্থ হল ভরত বংশের মহান উপাখ্যান। গ্রন্থেই উল্লিখিত হয়েছে যে, ভারত নামে ২৪,০০০ শ্লোকবিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্রতর আখ্যান থেকে মহাভারত মহাকাব্যের কাহিনীটি বিস্তার লাভ করে। তবে ব্যাস প্রথমে ৮৮০০ শ্লোক বিশিষ্ট জয় (বিজয়) নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। পরে ব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন সেই গ্রন্থকে বৃদ্ধি করে ২৪০০০ শ্লোক বিশিষ্ট ভারত গ্রন্থ রচনা করেন। পরে অপর এক শিষ্য উগ্রশ্রবা ভারত গ্রন্থকে বৃদ্ধি করে এক লাখ শ্লোক বিশিষ্ট “মহাভারত” গ্রন্থ রচনা করেন। মহাভারতে এক লক্ষ শ্লোক ও দীর্ঘ গদ্যাংশ রয়েছে। এই মহাকাব্যের শব্দসংখ্যা প্রায় আঠারো লক্ষ। মহাভারত মহাকাব্যটির আয়তন ইলিয়াড ও ওডিসি কাব্যদ্বয়ের সম্মিলিত আয়তনের দশগুণ এবং রামায়ণের চারগুণ।

গ্রন্থ রচনা

মহাভারতে বর্ণিত হয়েছে, মহর্ষি বেদব্যাস হিমালয়ের এক পবিত্র গুহায় তপস্যা করবার পর মহাভারতের সম্পূর্ণ ঘটনাটি স্মরণ করেন এবং মনে মনেই এর রচনা করেন। ব্যাসদেব চাইলেন এই মহান কাহিনি সিদ্ধিদাতা গণেশের দ্বারা লিপিবদ্ধ হোক। গণেশ লিখতে সম্মত হলেন, কিন্তু তিনি শর্ত করলেন যে, তিনি একবার লেখা শুরু করলে তার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাসদেবের আবৃত্তি একটিবারও থামতে পারবে না। তখন ব্যাসদেব বুদ্ধিমতো পাল্টা একটি শর্ত উপস্থাপনা করলেন – “গণেশ যে শ্লোকটি লিখবেন, তার মর্মার্থ না বুঝে লিখতে পারবেন না”। ভগবান গণেশ এই প্রস্তাব স্বীকার করলেন। এইভাবে ব্যাসদেব মাঝে মাঝে কিছু কঠিন শ্লোক রচনা করে ফেলতেন, যার ফলে গণেশকে শ্লোকটির অর্থ বুঝতে সময় লাগত এবং সেই অবসরে ব্যাসদেব তার পরবর্তী নতুন শ্লোকগুলি ভেবে নিতে পারতেন। এইরূপে সম্পূর্ণ মহাভারত রচনা করতে প্রায় ৩ বৎসর লেগে যায়। ব্যাসদেব প্রথমে অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের জয় সূচক উপাখ্যান যুক্ত ১০০০০০ শ্লোক সমন্বিত আদ্য জয় গ্রন্থ রচনা করেন। সর্বশেষে তিনি ষাট লক্ষ শ্লোক সমন্বিত অপর একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যে গ্রন্থের ৩০ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, ১৫ লক্ষ শ্লোক পিতৃলোকে, ১৪ লক্ষ রক্ষোযক্ষ লোকে স্থান পেয়েছে এবং অবশিষ্ট মাত্র ১ লক্ষ শ্লোক এই মনুষ্যলোকে ‘মহাভারত’ নামে সমাদৃত হয়েছে। এই সম্বন্ধে মহাভারতেই বর্ণিত হয়েছে :

“ত্রিংশচ্ছতসহস্রঞ্চ দেবলোকে প্রতিষ্ঠিতম্॥
পিত্রে পঞ্চদশ প্রোক্তং রক্ষোযক্ষে চতুর্দ্দশ।
একং শতসহস্রন্তু মানুষেষু প্রতিষ্ঠিতম্॥

গ্রন্থ প্রচার

মহাভারত রচনা সম্পূর্ণ হলে ব্যাসদেব এই কাব্য তার পুত্র শুকদেবকে দিয়ে অধ্যয়ন করান, পরে শিষ্য পরম্পরায় গ্রন্থটি বৈশম্পায়ন, পৈল, জৈমিনি, অসিত-দেবল প্রভৃতি ঋষি দ্বারা পঠিত হয়। শুকদেব এই গ্রন্থটির কাহিনি গন্ধর্ব, যক্ষ ও রাক্ষসদের মধ্যে, দেবর্ষি নারদ দেবতাদের মধ্যে ও অসিত-দেবল পিতৃদের মধ্যে প্রচারিত করেন। বৈশম্পায়ন এই কাহিনিটি প্রথম মনুষ্যদের মধ্যে ‘ভারত’ নামে প্রচার করেন। অর্জুনের প্রপৌত্র মহারাজ জন্মেজয়ের মহাযজ্ঞে ঋষি বৈশম্পায়ন ওই কাহিনি জন্মেজয় সহ সৌতি এবং উপস্থিত মুনি-ঋষিদের শোনান।

একদা সম্রাট পরীক্ষিৎ তক্ষক নাগের দংশনে মারা গেলে ক্রোধের বশে পরীক্ষিৎপুত্র জনমেজয় বিশ্বের সমস্ত সাপেদের ধ্বংস করবার পণ নিয়ে সর্পযজ্ঞের আয়োজন করেন। কিন্তু তক্ষকের অনুরোধে আস্তিক মুনি এই যজ্ঞ পণ্ড করে দেন। জনমেজয়ের অনুতাপ হয় ও পাপ খণ্ডন করতে অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেন। কিন্তু, কলিযুগে অশ্বমেধ যজ্ঞ করা অনর্থের কারণ মনে করে দেবরাজ ইন্দ্র ছল করে এই যজ্ঞও নষ্ট করেন ও জনমেজয়ের ওপর ব্রহ্মহত্যার পাপ পড়ে। এই মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে তিনি ব্যাসদেবের পরামর্শ মতো ঋষি বৈশম্পায়নের কাছ থেকে পবিত্র মহাভারতের কাহিনি শ্রবণ করে পাপমুক্ত হন। পরে ঐ যজ্ঞে উপস্থিত গল্পকথক উগ্রশ্রবা সৌতি কাহিনিটি শুনে তা নৈমিষারণ্যে যজ্ঞরত শৌনক ও অন্যান্য মুনিদের শোনান। এইরূপে মনুষ্যসমাজে মহাভারতের কাহিনি প্রচারিত হয়।

বিশালতা

মহাভারতের বিশালতা তথা দার্শনিক গূঢ়তা কেবল ভারতের পৌরাণিক আখ্যানই নয়, বরং এটিকে সমগ্র হিন্দু ধর্ম এবং বৈদিক দর্শন ও সাহিত্যের সারসংক্ষেপ বলা যেতে পারে। ‘মহাভারত’ নামটির উৎপত্তি প্রসঙ্গে একটি আখ্যান প্রচলিত যে, দেবতারা তুলাযন্ত্রের একদিকে চারটি বেদ রাখেন ও অন্যদিকে বৈশম্পায়ন প্রচারিত ভারত গ্রন্থটি রাখলে দেখা যায় ভারত গ্রন্থটির ভার চারটি বেদের চেয়েও অনেক বেশি। সেই কারণে ভারত গ্রন্থের বিশালতা দেখে দেবগণ ও ঋষিগণ এর নামকরণ করলেন ‘মহাভারত’। আবার একে ‘পঞ্চম বেদ’ও বলা হয়। জগতের তাবৎ শ্রেষ্ঠ বস্তুর সঙ্গে একে তুলনা করে বলা হয়েছে: “মহত্ত্বাদ্ ভারতবত্ত্বাচ্চ মহাভারতমুচ্যতে।

আরিফুর রহমান Changed status to publish জানুয়ারি 11, 2023